ভবন নির্মাণে ত্রুটি, কাজ বন্ধ

কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের নির্মাণাধীন ভবন। ২২ জুন দুপুরে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের নির্মাণাধীন ভবন। ২২ জুন দুপুরে তোলা ছবি। প্রথম আলো

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় কালী নারায়ণ ইনস্টিটিউশনের নির্মাণাধীন ভবনের দুটি বিম দেবে গেছে। এ ঘটনায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভবনের নির্মাণকাজ সাময়িক বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৯২২ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে নয় শ। অবকাঠামো-সংকটের কারণে বিদ্যালয়টির চারতলাবিশিষ্ট ওই ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় অধিদপ্তর। গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে এর নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৭ টাকা। তবে প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৮ ভাগ কমে ৬৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫২২ টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায় ফয়সাল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চ মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মে মাসের মাঝামাঝি নিচতলার ছাদ ঢালাই দেওয়া হয়। এরপর দুটি বিম দেবে যায়। পাশাপাশি বিম দুটির ওপরের ছাদের অংশও দেবে যায়। এরপর ওই বিম দুটিতে সিমেন্ট ও বালুর আস্তরণ দিয়ে দেবে যাওয়া অংশ সমান করা হয়। ছাদের অংশেও একইভাবে বালু-সিমেন্ট দিয়ে সমতল করা হয়।

ভবনটির বিম দেবে যাওয়ার পরও কাজ চালিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং এলাকাবাসী এতে বাধা দেন।

 পরে বিষয়টি তাঁরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে জানান। ২২ জুন সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটির পশ্চিম পাশের ছাদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বিমের মাঝামাঝি অংশ দেবে গেছে। বিম সমান করতে সিমেন্ট ও বালুর আস্তরণ দেওয়া হয়েছে। দেবে যাওয়া ছাদের অংশও একইভাবে আস্তরণ দিয়ে সমতল করা হয়েছে।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য রমজান আলী বলেন, একটি ভবনের মূল কাঠামো যদি দুর্বল হয়, তাহলে ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ঢালাই দেওয়ার সময় ছাদের দুটি বিম প্রায় সাত ইঞ্চি নিচের দিকে দেবে গেছে। একই সঙ্গে ছাদের ওই অংশও নিচের দিকে দেবে গেছে। এভাবে ত্রুটিযুক্ত রেখে ভবন নির্মাণ করা হলে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ব্যবস্থাপনা কমিটির আরেক সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, দুটি বিম দেবে যাওয়ার পরও নির্মাণকাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যসচিব সামছুন্নাহার বলেন, বিম দেবে যাওয়ায় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরাই নির্ধারণ করতে পারবেন। তবে এই ত্রুটির কারণে ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী ছাদ ও বিমে রড দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা ঢালাইয়ের আগে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। শাটারিংয়ের কয়েকটি বাঁশ দেবে যাওয়ায় বিমের সামান্য অংশ দেবে যায়। এ কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কথা নয় বলে তিনি দাবি করেন।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আলতাব হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টির বিম দেবে যাওয়ার বিষয়টি জানার পর তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। এরপর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। জুলাই মাসে একটি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশল দল সরেজমিন পরিদর্শন করে পরবর্তী সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরামর্শ দেবে।