এলিয়ন গাড়ি ছিনতাইয়ের জন্যই উবারচালক আরমানকে বেছে নেন তাঁরা

গ্রেপ্তার তিন আসামি। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তিন আসামি। ছবি: সংগৃহীত

চোরাই মোটরসাইকেল ও গাড়ির ব্যবসায়ী বন্ধুকে একটি এলিয়ন মডেলের গাড়ি জোগাড় করে দিলে নগদ আট লাখ টাকা পাবেন—এমন প্রলোভনেই তিনজন মিলে উবারচালক আরমানকে হত্যা করেন। উদ্দেশ্য ছিল আরমানের গাড়িটি ছিনতাইয়ের। গতকাল শনিবার রাজধানীসহ আশপাশের কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে উবারচালক আরমান হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। গ্রেপ্তারের পর তাঁদের দেওয়া তথ্যেই এমনটা জানা যায়।

১৩ জুন দিবাগত রাত দুইটায় রাজধানীর উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে একটি বাড়ির সামনে একটি গাড়ির ভেতর থেকে উবারচালক মো. আরমানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরের দিন উত্তরা পশ্চিম থানায় নিহত চালকের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন হত্যা মামলা করেন। আরমানের গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী থানার ফতে মোহাম্মদপুরে।

লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ডিবির উত্তর বিভাগের উত্তরা জোনাল টিম উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অব্যাহত অভিযান পরিচালনা করতে থাকে। পরে গতকাল সিজান (২৪), শরিফ (১৯) ও সজীব (২০) নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার চাঞ্চল্যকর বর্ণনা দেন তাঁরা।

ডিবির উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ১৩ জুন রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিজান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হত্যাকারী শরিফ ও সজীব। এলিয়ন মডেলের একটি গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রথমে সিজান রামপুরায় তাঁর বাসার ছাদে শরিফকে নিয়ে পরিকল্পনা সাজান। পরে শরিফ তাঁর বন্ধু সজীবকেও এই পরিকল্পনায় যুক্ত করেন। তাঁরা ছিনতাইয়ের জন্য চালককে হত্যা করতে একমত হন। সিজানের এক বন্ধু খুলনায় চোরাই মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার কেনাবেচা করেন। সেই বন্ধু বলেছিলেন যে এলিয়ন গাড়ি দিতে পারলে নগদে ৮ লাখ টাকা দেবেন। এই আট লাখ টাকার লোভেই তাঁরা এই হত্যার পরিকল্পনা সাজান।

মশিউর রহমান বলেন, আসামিদের দেওয়া ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, ওই দিন তাঁরা তিনজন সন্ধ্যায় রিকশায় করে নিউমার্কেটে যান। নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের পাশে একটি দোকান থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে দুটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন। এরপর ১১টার দিকে তাঁরা প্রথমে একটি উবার কল করেন। তবে ওই উবারের গাড়িটি এলিয়ন না হওয়ায় তাঁরা তা বাতিল করে দেন। এভাবে পাঁচবারের চেষ্টায় উবারের একটি এলিয়ন গাড়ি পান তাঁরা। গাড়িটি ছিল মো. আরমানের। রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে আরমান পূর্ব রামপুরা ইস্টার্ন হাউজিং থেকে ওই তিনজনকে গাড়িতে তোলেন। সিজান গাড়ির সামনে চালকের পাশে বসেন, শরিফ চালকের পেছনের আসনে বসেন এবং সজীব পেছনে বাঁ পাশের আসনে বসেন। তাঁরা উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর রোডের ৭১ নম্বর বাড়ির কাছে নির্জন রাস্তায় গাড়িটি নিয়ে যান। উবারের বিল পরিশোধ না করে আরমানকে অপেক্ষা করতে বলেন। গাড়ি থামানোর পর সিজান, শরিফ ও সজীব পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যার সুযোগের জন্য প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে চারদিক নিরাপদ মনে করে সিজান ইশারা করেন। পরে শরিফ পেছনের সিট থেকে আরমানের মাথার চুল পেছনের দিকে টেনে ধরে সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে গলা কেটে ফেলেন। গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে এলে তাঁরা গাড়ি থেকে নিচে নেমে দাঁড়ান। কিন্তু পরে আশপাশের অবস্থা নিজেদের অনুকূল মনে না হওয়ায় গাড়ি রেখেই পালিয়ে যান।

তদন্ত ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ ঢাকার উত্তরাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে সিজান, শরিফ ও সজীবকে গ্রেপ্তার করেন। আসামিদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি সুইচ গিয়ার চাকু ঘটনাস্থলের কাছে একটি জায়গা থেকে উদ্ধার করা হয়। এর সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।