আবর্জনায় ভরাট নর্দমা, দুর্ভোগ

নালার মধ্যে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লার স্তূপ। গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকায়।  প্রথম আলো
নালার মধ্যে পলিথিনসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লার স্তূপ। গত বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজার শহরের কুসুমবাগ এলাকায়। প্রথম আলো

শহরের বিভিন্ন স্থানে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান আছে। আবার রাস্তা ও বাসাবাড়ি থেকে প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার করে নিয়ে যাচ্ছেন পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। এরপরও একশ্রেণির বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশের পাকা নর্দমার (ড্রেন) মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য, ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। এতে করে নালা ভরাট হয়ে ভারী বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে করে মৌলভীবাজার শহরের এম সাইফুর রহমান সড়কের (সাবেক সেন্ট্রাল রোড) কালীবাড়ি এলাকা, কুসুমবাগের এস আর প্লাজা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নালার পানি উপচে সড়কে উঠে আসছে। বিভিন্ন দোকান, এমনকি নিচু বাসাবাড়িতেও পানি উঠছে। একইভাবে গোবিন্দশ্রী, দক্ষিণ কলিমাবাদসহ কিছু আবাসিক এলাকার নিচু স্থানেও তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরের পানিপ্রবাহের একমাত্র মাধ্যম কোদালীছড়া। দীর্ঘদিনে কোদালীছড়া ভরাট এবং দখলের কারণে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল। ভারী বর্ষণ হলেই পানি ফুলেফেঁপে শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় গত বছর মৌলভীবাজার শহর অংশে কোদালীছড়া খনন করা হয়েছে। এতে সুফলও মিলেছে। গত বর্ষায় পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি। চলতি বর্ষায় এখনো কোথাও আগের মতো জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। এরপরও কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে, কিছু মানুষের অসচেতনতা। দেখা গেছে, আবাসিক এলাকায় নালার মধ্যে অন্যান্য আবর্জনার সঙ্গে ফেলা হয়েছে ককশিট ও পলিথিন। নালার মধ্য দিয়ে গেছে গ্যাসের পাইপলাইন। তাতে ওই সব বর্জ্য আটকে গিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করতে গত বৃহস্পতিবার শহরের কুসুমবাগ এলাকায় যান পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এম এ আহাদ, পৌর কাউন্সিলর জালাল আহমদসহ স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা দেখেন, নালার মধ্যে ফেলা হয়েছে পোড়া তেল, মবিল, মাংসের চর্বিসহ হোটেল-রেস্তোরাঁর বিভিন্ন ধরনের ময়লা-আবর্জনা। নালার মধ্যে চর্বি জমাট হয়ে পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে। এসব ময়লার স্তূপ এতটাই শক্ত যে মানুষ তার ওপর দাঁড়াতে পারছে। ময়লা-আবর্জনা শক্ত হয়ে যাওয়ায় পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পশ্চিমবাজারের কুদরত উল্লাহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা ঢাকনার ফাঁক দিয়ে নালার মধ্যে ময়লা ফেলছেন। পলিথিনসহ অপচনশীল বিভিন্ন বর্জ্য ফেলার কারণে নালার মধ্যে বাঁধের মতো সৃষ্টি হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি হলেই নালা দিয়ে পানি দ্রুত নামতে পারছে না। এ ছাড়া কিছু বাসাবাড়ির লোকজন চার-পাঁচতলা থেকে নালার মধ্যে বাসার ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। নানাভাবে তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা করা হলেও অনেকের যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর এসব ময়লা-আবর্জনা কোদালীছড়ায় গিয়ে পড়ছে।

দক্ষিণ কলিমাবাদের বাসিন্দা সজল আকাশ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এলাকার ড্রেন কিছুটা ছোট। এর মধ্যে ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ছিল। এ কারণে পানি নামতে পারেনি। সমস্যা হয়েছে। অনেক বাসার ভেতর পানি ঢুকেছে।’

পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নর্দমার মধ্যে ককশিট ও পলিথিন মিলছে। কুসুমবাগ এলাকায় হোটেলের পোড়া তেল, মবিল, চর্বি ড্রেনে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে শহরের সেন্ট্রাল রোড, কুসুমবাগ, দক্ষিণ কলিমাবাদসহ কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টি থামার আধা ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে যাচ্ছে। ড্রেনে ময়লা না ফেলা হলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। তিনি বলেন, ‘পৌরসভার লোকজন বাসাবাড়ি ও রাস্তা থেকে প্রতিদিন ময়লা পরিষ্কার করে নিচ্ছেন। এরপরও লোকজন ড্রেনে ময়লা ফেলছেন। মানুষ সচেতন না হলে যতই পরিষ্কার করি, লাভ হবে না। আগে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’