বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলে আ.লীগ নেতার প্রতারণা

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার নাম করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রায় ২০০ ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জাহানপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ওই টাকা আদায় করেছেন।

দেড় বছর ধরে দফায় দফায় টাকা দিলেও ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা আজও বিদ্যুৎ পাননি। এ ব্যাপারে জাহানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নানাইচ গ্রামের বাসিন্দা মতিশ পাহান ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর পক্ষে ২৫ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

পশ্চিম নানাইচ গ্রামের মতিশ পাহানসহ বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য আবেদন করা কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, পশ্চিম নানাইচ গ্রামের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার নামে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কয়েক দফায় গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে তিন-চার হাজার টাকা করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা আদায় করেন। গ্রামে ইতিমধ্যে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার টানানো হলেও মিটার সংযোগ না দেওয়ায় বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না আবেদনকারীরা।

গত শুক্রবার পশ্চিম নানাইচ গ্রামে গিয়ে একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মধ্যে রণজিৎ কুমার নামের একজন বলেন, ‘প্রথমে পোল (বিদ্যুতের খুঁটি) বাবদ কারও কাছ থেকে ১ হাজার, আবারও কারও কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে মিটার ও ট্রান্সফরমার লাগানোর কথা বলে আরও ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার করে টাকা করে আবেদনকারীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার টানানোর পর বাড়িতে মিটার লাগানোর জন্য পল্লী বিদ্যুতের লোকজন প্রত্যেক গ্রাহককে ৪৫০ টাকা করে দিতে বলছেন। গ্রামবাসী মোয়াজ্জেমকে টাকা দেওয়ার কথা বললে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলে আমাদের জানান।’

নিতীশ পাহান নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘মোয়াজ্জেম আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। অথচ তিনি বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার নাম করে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে তিন-চার হাজার টাকা করে আদায় করেছেন। এই প্রতারকের কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত।’

নজরুল ইসলাম নামের পশ্চিম নানাইচ গ্রামের আরেক বাসিন্দা বলেন, মোয়াজ্জেম এর আগে একাধিকবার এই গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগের উদ্বোধন করা হবে বলে তারিখ দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনোবারই তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিদ্যুৎ-সংযোগ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়নি। এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের মিটারই লাগানো হয়নি।

আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক চাল। এই টাকা আদায়ের পেছনে আরও অনেকেই জড়িত। আমি শুধু দু-একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা আদায়ে তাঁদের সহযোগিতা করেছি। আমি ব্যক্তিগত স্বার্থে কারও কাছ থেকে বিদ্যুতের সংযোগের জন্য টাকাপয়সা নিইনি। যাঁরা এই টাকা পেয়েছেন, এখন তাঁরাই আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।’ তবে কাদের জন্য তিনি টাকা আদায় করেছেন, এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ ব্যাপারে ধামইরহাট পল্লী বিদ্যুতের উপ-আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হানিফ রেজা বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে ওই গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে এখন কোনো ঘুষ দিতে হয় না। পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী শুধু বিদ্যুতের মিটার লাগানোর জন্য গ্রাহকদের ৪৫০ টাকা করে দিতে হয়। এর বাইরে আর কোনো টাকা লাগে না।’

হানিফ রেজা দাবি করেন, ‘পশ্চিম নানাইচ গ্রামের আবেদনকারীরা বিদ্যুতের জন্য মোয়াজ্জেম নামের যে ব্যক্তিকে টাকা দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এ ধরনের লোককে টাকা দিয়ে গ্রাহকেরা প্রতারিত হলে এর দায় আমরা নেব না। এর জন্য তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।’