দখল ঠেকাতে দেয়াল

টিনের স্থাপনা বানিয়ে চলছে দখল (বাঁয়ে)। দখল ঠেকাতে দেয়াল দিয়েছে বন্দর। গতকাল দুপুরে কর্ণফুলীর মাঝিরঘাট বাংলাবাজার এলাকায়। ছবি: সৌরভ দাশ
টিনের স্থাপনা বানিয়ে চলছে দখল (বাঁয়ে)। দখল ঠেকাতে দেয়াল দিয়েছে বন্দর। গতকাল দুপুরে কর্ণফুলীর মাঝিরঘাট বাংলাবাজার এলাকায়। ছবি: সৌরভ দাশ

উচ্ছেদের চার মাসের মাথায় কর্ণফুলী নদীর উদ্ধার করা জায়গা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে নগরের মাঝিরঘাট বাংলাবাজার এলাকায় প্রায় ১০টি লবণ কারখানা ও গুদাম নতুন করে নির্মাণ করেছেন আগের দখলদারেরা। চার মাস আগে উচ্ছেদের সময় এই কারখানাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

উচ্ছেদ করা অংশে প্রায় দুই মাস আগে একটি সীমানাদেয়াল দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ করার পর জেলা প্রশাসনের দেওয়া সীমানাচিহ্ন ও বন্দরের সীমানাদেয়ালের ভেতরের অংশ দখল করে নতুন করে এসব টিনের স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা তাদের আইন অনুযায়ী এই দেয়াল দিয়েছে। বাংলাদেশ জরিপ (বিএস সার্ভে) অনুযায়ী ওই জায়গা বন্দরের বলে দাবি করছে। উচ্ছেদ করা জায়গায় অনেকগুলো স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন আমরা রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদকে পাঠাব।’ এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দায়িত্ব পুরোপুরি বন্দর কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা যদি তা না করে নতুন করে স্থাপনার অনুমতি দেয়, তাহলে কী করা যাবে?

হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় সদরঘাট থেকে মাঝিরঘাট এলাকায় প্রায় ২০ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করে নদীর অংশ চিহ্নিত করে সীমানাখুঁটি দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান বলেন, ‘কত কষ্ট করে এই উচ্ছেদ করেছিলাম। এখন সেখানে নতুন করে স্থাপনা গড়ে উঠছে। এখন উচ্ছেদ কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।’

গতকাল শনিবার মাঝিরঘাটে দেখা গেছে, উদ্ধার করা জায়গার প্রায় ৬২ ফুট অংশ ঘিরে লম্বালম্বি পাকা দেয়াল নির্মাণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪২০ ফুট দীর্ঘ দেয়ালের বাইরে (রাস্তার দিকে) গড়ে তোলা হয়েছে নতুন করে প্রায় ১০টি টিনের স্থাপনা। এগুলো লবণের গুদাম ও কারখানার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

>

উদ্ধার হওয়া জায়গায় ১০টি লবণ কারখানা ও গুদাম নির্মাণ করেছেন আগের দখলদারেরা
দখল ঠেকাতে দুই মাস আগে দেয়াল দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ

মাঝিরঘাটের বাজারগলি থেকে আনু মাঝিরঘাট খালের মাথা পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে এই দেয়াল দেওয়া হয়। খালের পাশ ধরে আবার নদীর মুখ পর্যন্ত আরেকটি দেয়াল দেওয়া হয় উত্তর-দক্ষিণে। এই সীমানাদেয়ালের পাশ ঘেঁষে ফারিয়াল সল্ট অ্যান্ড ক্রাশিং, নূরে মদিনা সল্ট, আল মদিনা সল্টসহ বেশ কয়েকটি কারখানা ও গুদাম হয়েছে। অথচ এসব কারখানা ও গুদাম উচ্ছেদের সময় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

নূরে মদিনা সল্টের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘উচ্ছেদের সময় আমাদের দুটি কারখানা ভেঙে ফেলা হয়েছিল। এখন নতুন করে আবার টিনের স্থাপনা নির্মাণ করেছি। বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে কাজ শুরু করব।’

কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রিট আবেদনকারী হাইকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বন্দর কর্তৃপক্ষ সীমানাদেয়াল দিলে দিক। কিন্তু উচ্ছেদ করা অংশে নতুন করে স্থাপনা গড়ে তোলা যাবে না। বন্দর কর্তৃপক্ষও এই অনুমতি দিতে পারবে না। এটা হলে আমি আবার আদালতের দ্বারস্থ হব।’

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের আইনজীবী মনজিল মোরসেদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী জেলা প্রশাসন উচ্ছেদকাজ শুরু করেছিল। তবে গত ৯ এপ্রিল কর্ণফুলী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব স্থাপনা এক মাসের মধ্যে অপসারণ করতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন আদালত।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপব্যবস্থাপক (ভূমি) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নতুন করে কেউ যাতে দখল করতে না পারে, সে জন্য বাংলাবাজার এলাকায় দেয়াল দেওয়া হয়েছে। দেয়ালের বাইরের অংশে (রাস্তার দিকে) আমাদের জমি রয়েছে। ওখানে কারা অস্থায়ী স্থাপনা করছে, তা দেখে বলতে হবে। আমাদের অনুমতি আছে কি না, তা-ও এখন বলতে পারছি না। তবে অবৈধভাবে কেউ কিছু করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’