রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশিরা সবক দিয়ে যায়: রিয়াজুল হক

‘রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ার‍্যান কাজী রিয়াজুল হক। ছবি: প্রথম আলো
‘রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ার‍্যান কাজী রিয়াজুল হক। ছবি: প্রথম আলো

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান রিয়াজুল হক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন দেশ ও সহায়তা সংস্থার লোকজন এসে সহায়তার পাশাপাশি নানা রকম সবক দিয়ে যান। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা দেখা যায়নি। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে মিয়ানমারকে যথেষ্ট চাপ আন্তর্জাতিক মহল প্রয়োগ করতে পারেনি।

‘রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধান’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন রিয়াজুল হক। আজ রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে কমিশনের সম্মেলনকক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।

রিয়াজুল হক বলেন, দুই বছর আগে নিপীড়নের শিকার হয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার উৎকর্ষ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের এই ভূমিকা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। ওই সময় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। নিজ দেশে তাদের নির্বিঘ্নে ফিরে যাওয়া দরকার। রোহিঙ্গারাও ফিরে যেতে চায়। কিন্তু এর আগে তারা নিরাপত্তা চায়, নিরাপদ পরিবেশ চায়। আমরাও তাদের আগুনে ফেলে দিতে পারি না।’

রিয়াজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বিশ্ব বাংলাদেশের প্রশংসা করলেও যারা এ ঘটনার মূলে, সেই মিয়ানমারকে তারা কোনো কিছুতে বাধ্য করতে পারেনি। মানবিকতার কাছে সবকিছু কী পরাজিত হবে? একটি দেশ কি এত শক্তিশালী যে তার বিরুদ্ধে কারও কিছু বলার নেই?

আজকের অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি স্টিভেন কর্লিস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এ জন্য দেশের সরকারের পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বিশেষ করে টেকনাফ ও উখিয়ার মানুষ অসীম ধৈর্য দেখিয়েছে।

স্টিভেন কর্লিস বলেন, এত মানুষ আশ্রয় নিলেও বড় ধরনের কোনো বিপর্যয় হয়নি। এটা বড় সার্থকতা। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন এখন বড় বিষয়। মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর আগে এসব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে মিয়ানমার যতটা গবেষণা করেছে, বাংলাদেশ তা করেনি বলে মনে হয়। আমরা তিস্তা ইস্যুতে যত কথা বলি, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ততটা নয়। রোহিঙ্গা ইস্যু শুধু স্থানীয় অর্থনীতির জন্য নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি, ভৌগোলিক পরিবেশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ইত্যাদি নানা বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই আমাদের বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার অবকাশ নেই।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. নজরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি সহযোগী আশফাকুর রহমান খান, সেভ দ্য চিলড্রেনের আয়েশা আক্তার প্রমুখ।