আদালতে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাননি মোয়াজ্জেম

আদালতে কথা বলার সুযোগ চেয়ে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবীরা আবেদন করেন। আদালত সেই আবেদন নাকচ করে দেন।

শুনানির সময় মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘স্যার, আমরা মক্কেলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এই অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছি। আমরা আইনি পরামর্শ করতে চাই।’ মোয়াজ্জেমের আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বলেন, ‘আদালতে বসে কথা বলার পারমিশন দেব না। আপনার মক্কেলের সঙ্গে কারাগারের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন।’

আদালত আগামী ১০ জুলাই মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানির নতুন দিন ঠিক করেছেন। ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগের মামলায় আজ রোববার অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানির দিন ঠিক ছিল। আসামি মোয়াজ্জেমকে সকালে প্রিজনভ্যানে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকার আদালতে আনা হয়। পরে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায়। দুপুর ২টার দিকে কড়া নিরাপত্তা দিয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের এজলাসে আনা হয়।

শুনানির শুরু থেকে মোয়াজ্জেম আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁর সামনে পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্য ছিলেন। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক হোসেন শুনানির শুরুতে আদালতকে বলেন, ‘মামলার বিচার্য বিষয় যে ভিডিও বাদী পেনড্রাইভে করে আদালতে জমা দিয়েছেন, তার অনুলিপি চেয়ে আমরা আবেদন করেছি। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষ ওই ভিডিওর অনুলিপি পাওয়ার দাবি রাখেন।’

তখন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম আদালতকে বলেন, বাদী পেনড্রাইভে করে যে ভিডিও আদালতে জমা দিয়েছেন তা সবাই দেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখনো ওই ভিডিও আছে। আইন অনুযায়ী, ওই ভিডিও মামলার আলামত। আলামতের অনুলিপি আসামিপক্ষ পেতে পারে না। আর এই ধরনের আলামত দেওয়ার বিষয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কিছু উল্লেখ নেই।

সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ তখন বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একটা বিশেষ আইন। এই আইনে উল্লেখ আছে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী বিচার হবে। ফৌজদারি কার্যবিধি এবং সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী, আসামি ওই ভিডিওর অনুলিপি পাওয়ার হকদার। পিপি নজরুল ইসলাম আদালতকে বলেন, ‘সবার উপস্থিতিতে ওই ভিডিও আমরা দেখাতে পারি। কিন্তু ভিডিওর কপি আসামিপক্ষ পেতে পারে না।’

মোয়াজ্জেমের আরেক আইনজীবী আবু সাঈদ সাগর আদালতকে বলেন, যে ভিডিও এই মামলার বিচার্য বিষয়, সেই ভিডিও অবশ্যই আসামি পক্ষ দেখার দাবি রাখে। আইনজীবী ফারুক আদালতকে আরও বলেন, এ মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম বড় কথা না, ন্যায়বিচার বড় কথা। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামিপক্ষ ওই ভিডিওর অনুলিপি পেতে পারেন। পিপি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজ অভিযোগ গঠন বিষয়ক শুনানির দিন আছে। আসামিপক্ষ থেকে সময়ের কোনো আবেদন নেই। আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার আবেদন করছি।’

আসামিপক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের শুনানির সময় চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত আগামী ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন দিন ঠিক করেন। জনাকীর্ণ আদালতের ভিড় ঠেলে ফারুক আহম্মেদ সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের সঙ্গে কথা বলেন। ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘কারাগারে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা করব।’ এ সময় মোয়াজ্জেম মুচকি হাসি দেন। পরে যখন মোয়াজ্জেমকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়, মোয়াজ্জেম বরাবরের মতো মুখ নিচু করে রাখেন।

শুনানি শেষ হলে পিপি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে আদালতে বাদীর জমা দেওয়া ভিডিওর অনুলিপি দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১৬ জুন গ্রেপ্তার হন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। পরের দিন তাঁকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মোয়াজ্জেমের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেদিন মামলার বাদী সৈয়দ সাইয়েদুল হক আদালতকে বলেছিলেন, আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। তবে মোয়াজ্জেমকে নির্দোষ দাবি করেন তাঁর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। সেদিন থেকে কারাগারে আছেন মোয়াজ্জেম।

ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় পরীক্ষা দিতে গেলে গত ৬ এপ্রিল নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এর ১০ দিন আগে নুসরাত ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

কারাগারে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। গত সপ্তাহে আদালত কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আদেশ দেন।

মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ আদালতের কাছে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে তিনি বেতন পান। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় জেলকোড অনুযায়ী মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির বন্দীর মর্যাদা পাওয়ার হকদার।

ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ২৭ মে মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।