দলিল জালিয়াতির অভিযোগে আ. লীগ নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বগুড়া
বগুড়া

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কয়েক কোটি টাকা মূল্যের ৩৩ শতাংশ খাসজমির দলিল জালিয়াতির অভিযোগে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের নেতাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ রোববার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়ার সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলা করা হয় দুদকের বগুড়া কার্যালয়ে।

আসামিদের নয়জন হলেন আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিসরুল হামিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুল ইসলাম, থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু রেজা খান, থানা যুবলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান, উপজেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম, থানা কৃষক লীগের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ, এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত মো. শহিদুল ইসলাম ওরফে হিটলু, তাঁদের সহযোগী আয়ুব খাঁন ও চন্দন কুমার। তাঁরা জমির ক্রেতা। বাড়ি আদমদীঘি উপজেলায়। অন্য তিনজন হলেন আদমদীঘি উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলী, দলিল লেখক রাকিব হোসেন ও জমির বিক্রেতা নওগাঁ সদর উপজেলার রবীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী।

সরকারি ‘ক’ তফসিলভুক্ত জমির দুর্নীতি নিয়ে গত ২০ জানুয়ারি দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে ‘খাসজমি দখল নিতে দলিল জালিয়াতি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপটে তদন্তে নামে দুদক।

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার পৌরসভায় কলসা মৌজা। এ জমির জুরিসডিকেশন লিস্ট (জেএল) নং-১৭১। দাগ নম্বর ১৭৬। এমআরআর খতিয়ান নম্বর ০৮। এই দাগে জমির পরিমাণ ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে সান্তাহার ইউপির নামে ৭ শতাংশ রেকর্ড হয়। বাকি ২৫ শতাংশ উপজেলা পরিষদের নামে আছে। এখানে পুকুর ও দোকানঘর রয়েছে। এই ৩৩ শতাংশ জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে এমআরআর খতিয়ানভুক্ত। সান্তাহার-বগুড়া প্রধান সড়কের পাশেই জমির অবস্থান। এই জমির জাল কাগজপত্র দিয়ে আদমদীঘি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় নিবন্ধিত হয় গত বছরের ৪ অক্টোবর। ৩৩ শতক জমি বিক্রি করা হয় ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায়। উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন মো. ইউসুফ আলী। জমির ভুয়া মালিক সাজানো হয় নওগাঁ জেলার দুবলহাটি রাজবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ রায়কে।

দলিল সূত্রে এই জমির মালিকানা দাবি করেন ক্রেতারা। তবে দুদক মামলার এজাহারে বলছে, ক্রেতারা নওগাঁর বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে ভুয়া নথিপত্র তৈরি করেন। তাঁর কাছ থেকে মাত্র ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় ওই সম্পত্তি কিনে নেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সান্তাহারের গুরুত্বপূর্ণ এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য ২ কোটিরও বেশি হবে। জমির মালিকানা সংক্রান্ত মূল নথি না থাকলেও সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ ও দলিল লেখক সরকারি সম্পত্তির দলিল সম্পাদন করেন। আসামিরা পারস্পরিক যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যক্তিস্বার্থে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য জাল দলিল ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করেছেন। তাদের অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।

জমির সাজানো মালিক রবীন্দ্রনাথ এই জমির খাজনা দেওয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। রবীন্দ্রনাথ বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর বেদখল জমি আছে। তিনি সেগুলোর খোঁজ জানেন না। কোন জমি তাঁর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে তাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেছেন।

জানতে চাইলে আদমদীঘি উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী বলেন, ‘উপস্থাপিত কাগজপত্রের আলোকে জমি নিবন্ধন আইন ও বিধি মোতাবেক জমি নিবন্ধন করা হয়েছে। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’