১০ টাকায় চক্ষু চিকিৎসাসেবা

চিকিৎসক দেখানোর জন্য অপেক্ষায় রোগীরা। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে।  ছবি: প্রথম আলো
চিকিৎসক দেখানোর জন্য অপেক্ষায় রোগীরা। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জের মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

বাঁ চোখের সমস্যা নিয়ে কেরানীগঞ্জ থেকে মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে এসেছেন আয়েশা বেগম (৫৫)। ১০ টাকায় টিকিট কেটে চোখ দেখিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে। এত কম টাকায় চিকিৎসককে চোখ দেখাতে পেরে দারুণ খুশি গৃহকর্মী আয়েশা।

আয়েশার মতো সমাজের এমন নিম্ন আয়ের মানুষকে দুই যুগের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের ফরাশগঞ্জের মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতাল। ১৯৯১ সালে ‘দাও আলো, দাও জীবন’ স্লোগানে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু করে। ২৫ শয্যার এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে মাওলা বখ্‌শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্ট। ট্রাস্ট হিসেবে ঢাকা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্‌শ হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।

ফরাশগঞ্জের মোহিনী মোহন দাস লেনের একটি দ্বিতল ভবনে হাসপাতালটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ট্রাস্ট সূত্র জানায়, আজিম বখ্‌শের বাবা মাওলা বখ্‌শ ছিলেন ঢাকার ২২ পঞ্চায়েতের অন্যতম সর্দার। তিনি মারা যাওয়ার আগে তাঁর সম্পত্তির একাংশ মানবতার কল্যাণে ব্যয় করার কথা বলে যান। পরে এই ট্রাস্ট গঠন করেন মোহাম্মদ আজিম বখ্‌শ। ট্রাস্টের কর্মীরা বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটিতে অস্ত্রোপচারসহ অন্যান্য খরচ নামমাত্র। তাই হাসপাতালটি দরিদ্র মানুষের ভরসার জায়গা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগী দেখেন চিকিৎসকেরা। প্রতিদিন রোগী আসে ২০০ জনের মতো। বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত শিশু ও বৃদ্ধ রোগীদের জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। অবশ্য তাদের দিতে হয় ২০০ টাকা করে। সম্প্রতি মাওলা বখ্‌শ সরদার দাতব্য চক্ষু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পরিপাটি হাসপাতালে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় রোগীরা। চারটি কক্ষে বসে চারজন চিকিৎসক রোগী দেখছেন।

হাসপাতালে কথা হয় শ্যামবাজারে মুদি দোকানের কর্মচারী মামুন মিয়ার সঙ্গে। জানালেন, তিনি কয়েক মাস ধরে চোখে ঝাপসা দেখছিলেন। এই সমস্যার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে পারছিলেন না। পরে মালিকের কথামতো এই হাসপাতালে এসেছেন। মাত্র ১০ টাকায় চিকিৎসা পেয়ে তিনি খুশি।

হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এই হাসপাতালে সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ১০ বছর মানুষকে একেবারে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা, ওষুধ, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। এখন নামমাত্র ফিতে চিকিৎসা ও পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে কেবিনের ভাড়া মাত্র ৩০০ টাকা। আর সাধারণ শয্যায় থাকলে কোনো টাকা নেওয়া হয় না।

হাসপাতালের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে মাওলা বখ্শ সরদার মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখ্শ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা মাওলা বখ্শ সরদার সব সময় মানবসেবায় ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৮৭ সালে তিনি মারা যাওয়ার আগে মানুষের জন্য সেবামূলক কিছু করার কথা বলেছিলেন। পরে বাবার সম্পত্তি দিয়ে তাঁরা ট্রাস্ট গঠন করেন। পরে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাঁচটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। তার একটি হলো এই হাসপাতাল। তিনি বলেন, প্রথমে দুটি কক্ষ নিয়ে হাসপাতালটির যাত্রা শুরু হয়। পরে ক্রমান্বয়ে এর পরিধি বাড়ানো হয়। এখন তাঁরা হাসপাতালের জন্য ছয়তলা ভবন করার পরিকল্পনা করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে এই হাসপাতালটিতে বিকেলে শিশুদের চিকিৎসাসেবা দেন কাজী ফাইয়াদ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা খুবই আন্তরিক। তাঁরা মানুষের সেবার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। তাই তাঁদের এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে খুবই উৎসাহ পাই। এখানে বেতন মুখ্য নয়, কাজ করাটাই আসল।’