অরক্ষিত নয়ারহাট সেতু

সাভারের নয়ারহাট সেতুর স্তম্ভে ভেড়ানো হয়েছে বালুবোঝাই বাল্কহেড। গত শনিবারের চিত্র।  অরূপ রায়
সাভারের নয়ারহাট সেতুর স্তম্ভে ভেড়ানো হয়েছে বালুবোঝাই বাল্কহেড। গত শনিবারের চিত্র। অরূপ রায়
>অধিকাংশ বাল্কহেড সেতুর দুই তীরের দুটি স্তম্ভে বেঁধে বালু নামানো হয়। বালুবোঝাই বাল্কহেড ভেড়ানোর সময় সেতুর দুই স্তম্ভে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে।

নৌযানের ধাক্কায় নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেঙে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে ঢাকার সাভারের নয়ারহাট সেতু। বেষ্টনী না থাকায় সরাসরি সেতুর স্তম্ভে নৌযানের ধাক্কা লাগছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বংশী নদীর ওপর ১৯৭ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয় ষাটের দশকে। নদীর এক পারে সাভারের নয়ারহাট ও অপর পারে ধামরাইয়ের ইসলামপুর। নদীর দুই তীরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) বেশ কয়েক একর জমি রয়েছে। ওই জমিতে ও সেতুর নিচে গদিঘর বসিয়ে চলছে বালুর ব্যবসা।
সওজের একাধিক কর্মকর্তা ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতুসংলগ্ন মহাসড়কের দুই পাশের সওজের জমি ও সেতুর নিচে অর্ধশতাধিক গদিঘর রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা গদিঘর বসিয়ে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এসব গদির জন্য বড় বড় বাল্কহেডে (নৌযান) করে বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু আনা হয়। অধিকাংশ বাল্কহেড সেতুর দুই তীরের দুটি স্তম্ভে বেঁধে বালু নামানো হয়। বালুবোঝাই বাল্কহেড ভেড়ানোর সময় সেতুর দুই স্তম্ভে প্রচণ্ড ধাক্কা লাগে। বাল্কহেডের ধাক্কা থেকে সেতুর স্তম্ভ দুটিকে রক্ষার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে তাতে নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাল্কহেডের ক্রমাগত ধাক্কায় তা ভেঙে গেছে। এখন ধাক্কা সরাসরি সেতুর স্তম্ভে লাগছে।
গত শনিবার সরেজমিনে ইসলামপুর প্রান্তে সেতুর একটি স্তম্ভের সঙ্গে বাল্কহেড বেঁধে বালু নামাতে দেখা যায়। এ সময় নয়ারহাট প্রান্তে স্তম্ভের সঙ্গে একটি খালি বাল্কহেড বাঁধা ছিল। ওই স্তম্ভটিতে (নয়ারহাট প্রান্ত) নৌযানের ধাক্কায় ভেঙে যাওয়া নিরাপত্তাবেষ্টনীর আংশিক দেখা গেলেও অপর প্রান্তের স্তম্ভে কোনো বেষ্টনী চোখে পড়েনি। ঘণ্টা দু-একের মধ্যে ইসলামপুর প্রান্তের বাল্কহেড থেকে বালু নামানো শেষ হলে বালুবোঝাই আরও একটি বাল্কহেড এসে ওই স্তম্ভে ভেড়ে। এ সময় বাল্কহেডের ধাক্কায় পুরো সেতু কেঁপে ওঠে।
নয়ারহাট প্রান্তে সেতুসংলগ্ন সওজের জমি ও নদী দখল করে গদিঘর বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বালুর ব্যবসা করে যাচ্ছেন ঢাকা জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুর বাছেদ দেওয়ান। তিনি বলেন, তাঁর গদিসহ ওই প্রান্তে ২৩টি গদিঘর রয়েছে। সব কটির অবস্থান সওজ ও সরকারি খাসজমিতে। তাঁদের মতো তিনিও ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি সওজের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গদি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানে আর বালুর ব্যবসা করা যাবে না।
বন্ধ করে দেওয়ার পরও বাল্কহেডে করে এখনো বালু আনার বিষয়ে আবদুর বাছেদ দেওয়ান বলেন, ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার জন্য কিছুদিন সময় নেওয়া হয়েছে। এই সুযোগে কেউ কেউ বালু এনে বিক্রি করছেন।
যোগাযোগ করা হলে সওজ মানিকগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন বলেন, সেতু ও সেতুর স্তম্ভ নিরাপদ রাখতে মাসখানেক আগে অভিযান চালিয়ে নদীর দুই তীরের সব গদিঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়। গদিতে থাকা বালু নিলামে বিক্রির দায়িত্ব দেওয়া হয় ধামরাই ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের। কিন্তু এক সাংসদের অনুরোধে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক মাসের সময় দিয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে বালুর ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু সেতুর নিরাপত্তা নয়, ইতিমধ্যে নদীর দুই তীরে যানজট কমাতে মহাসড়কের দুই পাশে ও নিচ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। তাই বালু ব্যবসায়ীদের আর বসতে দেওয়া হবে না।