দিরাইয়ে খুঁটিতে আটকে আছে সংস্কার কাজ

দিরাই পৌর শহরের বেহাল কলেজ রোডে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী। গতকাল সকালে।  প্রথম আলো
দিরাই পৌর শহরের বেহাল কলেজ রোডে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌরবাসী। গতকাল সকালে। প্রথম আলো

ঢালাই ভেঙে ইট-পাথরের সুরকি বেরিয়ে এসেছে।
বড় বড় গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। গর্তে
কাদাপানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। দেখে মনে হয় কাদামাটির সড়ক, যাতে যানবাহন চলে
হেলেদুলে। বর্ষায় বেহাল সড়কে হেঁটে চলাচল করারও উপায় নেই।
সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরের প্রধান সড়ক এটি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও দিরাই পৌরসভার মধ্যে ঠেলাঠেলিতে সাত বছর ধরে সড়কটির কোনো সংস্কার করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গত বছর সড়কের কাজ করতে রাজি হয়। সেই অনুযায়ী প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়। দরপত্র আহ্বানের পর ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পর এখন বিপত্তি বেধেছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। পৌর কর্মকর্তারা বলছেন, সড়কের সংস্কারকাজ করতে হলে ১২টি বিদ্যুতের খুঁটি সরাতে হবে। তিন মাস আগে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দিলেও খুঁটিগুলো সরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, অর্থের অভাবে খুঁটি সরানো যাচ্ছে না। ফলে সড়ক সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দিরাই পৌর শহরের প্রবেশমুখেই বাসস্ট্যান্ড। এরপর বাঁ দিকে কলেজ রোড হয়ে শহরের ভেতরে যেতে হয়। এটাই মূল সড়ক। বাসস্ট্যান্ড থেকে থানা পয়েন্ট পর্যন্ত দূরত্ব মাত্র ৬৮৬ মিটার। এই অংশটুকু সাত বছর ধরে বেহাল। বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকেই সড়কে খানাখন্দ আর ছোট–বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। থানা পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে সড়কের দুই পাশে রয়েছে দোকানপাট আর মানুষের ঘরবাড়ি। সড়কের স্থানে গর্ত হয়ে পানি জমে আছে। কোথাও কোথাও কাদা আর পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। দুই পাশে কাদা ও সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় পথচারীদের হেঁটে চলতেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
কলেজ রোডের বাসিন্দা মকবুল হোসেন বললেন, মানুষ বারো মাস এখানে ভোগান্তি পোহায়। বর্ষায় কাদাপানি আর শুকনোর সময় ধুলাবালি। কিন্তু কোনো কাজ আর হয় না। ব্যবসায়ী সাইফুর রহমান বলেন, বাইরের কেউ দেখলে ভাববে পুরো শহরটাই মনে হয় এ রকম। একে তো সড়ক বেহাল, তার ওপর সড়কে পানি জমে থাকায় বৃষ্টির দিনে চলা দায় হয়ে পড়ে। সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘সাত বছর ধরে এই সড়ক বেহাল। আমরা শুধু আশ্বাস পাচ্ছি, কাজ আর হচ্ছে না। আমরা চাই দ্রুত কাজ হোক।’
দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া বলেন, এই সড়ক সংস্কারে প্রায় চার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সড়ক ৩২ ফুট প্রশস্ত হবে, মাঝখানে বিভাজক থাকবে। একই সঙ্গে ড্রেন নির্মাণের কাজও আছে। কিন্তু বিদ্যুতের খুঁটির জন্য সড়কের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা আর কয়েক দিন দেখব, খুঁটি সরানো না হলে যে অবস্থায় আছে, সেভাবে রেখেই কাজ শুরু করে দেব। মানুষকে আর দুর্ভোগে রাখতে চাই না।’
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর বিষয়ে নিয়ম হলো, যে প্রতিষ্ঠানের কাজের জন্য এটি করা হবে, তারাই খরচ দেবে। কিন্তু পৌরসভা বলছে তাদের সেই অর্থ নেই। তাই বিষয়টি আবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের খরচেই খুঁটি সরানোর অনুমতি চাওয়া হয়েছে।