প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেলেন ঝালকাঠির নারী নরসুন্দর শেফালী

শেফালীর হাতে ঘর ও জমির কাগজ তুলে দিচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি, ২ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
শেফালীর হাতে ঘর ও জমির কাগজ তুলে দিচ্ছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। কাঁঠালিয়া, ঝালকাঠি, ২ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার নারী নরসুন্দর শেফালী রানীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমি ও ঘর উপহার দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শেফালীর হাতে জমি ও ঘরের কাগজপত্র তুলে দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

উপজেলার বলতলা দোগনা বাজারে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শেফালীর হাতে ৫ শতাংশ জমি ও সরকারি ঘরের অনুদানের কাগজ তুলে দেন প্রতিমন্ত্রী। শেফালী ১৫ বছর ধরে দোগনা বাজারে পুরুষের চুল-দাড়ি কেটে সংসার চালাচ্ছেন।

শেফালীকে ঘর ও জমির কাগজ দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এনামুর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন, বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না। সেই লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একমাত্র নারী নরসুন্দর শেফালী রানীকে জমি ও ঘর বরাদ্দের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই ঘর ও জমির কাগজপত্র নিয়ে তাঁর বাড়িতে এসেছি। দুই মাসের মধ্যেই তাঁর ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হবে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় শেফালী রানীর বিয়ে হয়। স্বামী বিশ্বনাথ শীলের দোগনা বাজারে সেলুন ছিল। অন্যের চুল-দাড়ি কেটে স্বামী যা আয় করতেন, তা দিয়ে কোনো রকম চলে যেত তাঁদের সংসার। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় চার মেয়ে ও এক ছেলে। ১৫ বছর আগে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিশ্বনাথ। বন্ধ হয়ে যায় শেফালীর সংসারের চাকা। নিজের চিকিৎসা ও সংসারের খরচ বহন করতে না পেরে নিরুদ্দেশ হয়ে যান বিশ্বনাথ। শেফালী কখনো ভাবেননি পুরুষের চুল-দাড়ি কেটে তাঁকে সংসার চালাতে হবে। তবে জীবনের তাগিদে অন্যের চুল-দাড়ি কেটে বর্তমানে সংসার ও পাঁচ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন শেফালী। এর মধ্যে মেজ মেয়ে বিএ তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। অন্য ছেলেমেয়েরাও পড়ালেখা করছে। প্রতিদিন সকালে যন্ত্রপাতি নিয়ে হাজির হন দোগনা বাজারে। সেখানে এক প্রবাসীর বসতঘরের বারান্দায় সারা দিন কাজ করেন নরসুন্দর শেফালী।

স্থানীয়রা জানান, শেফালীর শুরুটা ছিল খুব কঠিন ও বিব্রতকর। স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পরে ছেলেমেয়ে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তিনি। নিরুপায় হয়ে সিদ্ধান্ত নেন স্বামীর পেশাই গ্রহণ করবেন। বাজারে পুরুষের চুল-দাড়ি কাটার কাজ শুরু করলে প্রথমে বাধাবিপত্তি আসে। তবে এলাকাবাসীর হস্তক্ষেপে বাধা দূর হয়। এখন অনেকেই তাঁর প্রশংসা করছেন। নারী হয়ে পুরুষের সৌন্দর্য বর্ধনের সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ায় জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ২০১৮ সালে শেফালীকে জয়িতা সম্মাননা দিয়েছে।

শেফালী রানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী হয়ে পুরুষের চুল কাটি—এটা নিয়ে প্রথমে মানুষ হাসাহাসি করতেন। মনে মনে ভয় পেতাম, যাদের চুল কাটি তাদের কেমন দেখাবে। তবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাজারে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আয় হয়। হাটের দিন একটু কাজ বেশি হয়। আবার দুই-এক দিন গ্রাহক থাকে না। তখন বাজারের বিভিন্ন দোকানে পানি আনার কাজ করি। এতে একটু বাড়তি আয় হয়।’

শেফালী রানী আরও বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জায়গা নেই। অন্যের বাড়ির বারান্দায় সেলুন দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ৫ শতাংশ জমি ও ঘর দেওয়ায় তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’