নারায়ণগঞ্জের সেই শিক্ষকের স্বীকারোক্তি

আরিফুল ইসলাম
আরিফুল ইসলাম

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের স্কুলশিক্ষক আরিফুল ইসলাম ছাত্রীদের ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আহমেদ হুমায়ুন কবিরের আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন।

আদালতে হাজির করার আগে দুটি মামলায় তিন দিন করে মোট ছয় দিনের রিমান্ড হয় আরিফুলের। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তাঁর অপরাধ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, জবানবন্দিতে আরিফুল ছাত্রীদের সঙ্গে কীভাবে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, কীভাবে মুঠোফোনে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সেগুলো দিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেল করতেন—সে সবের বর্ণনা দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে আরিফুলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আরিফুলকে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুটি মামলায় ৩ দিন করে ৬ট দিনের রিমান্ড জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে হাজির করা হয়। জবানবন্দি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠান আদালত।

আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল (৩০) সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার অক্সফোর্ড হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক। তাঁর বাড়ি মাদারীপুর জেলা সদরের শিলখাড়া এলাকায়। তাঁর এসব অপকর্মে মদদ দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয় স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক জুলফিকার ওরফে রফিকুল ইসলামকে (৫৫)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার এক ছাত্রীকে অনৈতিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন আরিফুল। এরপর গত বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট ছাত্রীর পরিবার ও এলাকার লোকজন আরিফুলকে পিটুনি দিয়ে বিষয়টি র‌্যাবকে জানায়। এরপর র‌্যাব আরিফুল ইসলাম ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকারকে গ্রেপ্তার করে। আরিফুলের মুঠোফোন, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন ডিভাইসে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ভিডিও পাওয়া যায়। সেময় জিজ্ঞাসাবাদে আরিফুল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছেন, তিনি পরীক্ষায় কম নম্বর দেওয়া এবং ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে গত ৫ বছরে স্কুলের ও স্কুলের বাইরে ২০ ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন। ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের ওই ভিডিও ধারণের পর তা দিয়ে ব্ল্যাকমেল করে কয়েক ছাত্রীর মাকেও ধর্ষণ করেন।

আরিফুলের এমন ঘটনায় যৌন নির্যাতনের শিকার এক ছাত্রীর বাবা ও র‌্যাব বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা করে। গত শনিবার আরিফুলের ৬ দিন ও জুলফিকারকে এক দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী তাঁদের শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।