কারখানার আগুন কেড়ে নিল ৬ প্রাণ

গাজীপুরের শ্রীপুরে অটো স্পিনিং মিলে গতকাল আগুন লাগে। ৩ জুলাই, সকাল ১০টা। ছবি: সাদিক মৃধা
গাজীপুরের শ্রীপুরে অটো স্পিনিং মিলে গতকাল আগুন লাগে। ৩ জুলাই, সকাল ১০টা। ছবি: সাদিক মৃধা

গাজীপুরের শ্রীপুরের সুতা কারখানা অটো স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আজ বুধবার বেলা ১২টা পর্যন্ত নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে পৌঁছেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে লাগা আগুন মধ্যরাতে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আজ বুধবার সকালেও পুড়ে যাওয়া জিনিস সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। এ ঘটনায় ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সকালের দিকে মরদেহ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কাজ চলছিল।

গত মঙ্গলবার বেলা দুইটায় শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকার অটো স্পিনিং মিলের তুলার গুদামে আগুন লাগে। শুরুতে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট কাজ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও কয়েকটি ইউনিট যুক্ত হয়। সন্ধ্যার মধ্যে সেখানে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

আজ বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। একজন

গতকাল দুপুরে এক নিরাপত্তা কর্মীর পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন শ্রীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের মোহাম্মদ জয়নালের ছেলে এসি প্ল্যান বিভাগের আনোয়ার হোসেন (২৮), ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার আলাউদ্দিনের ছেলে নিরাপত্তা কর্মী রাসেল মিয়া (৪৫), গাজীপুর সদর উপজেলার হাসেন আলীর ছেলে কোয়ালিটি বিভাগের শাহজালাল (২৬), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ভান্নারা গ্রামের শামসুল হকের ছেলে সিনিয়র উৎপাদন কর্মকর্তা সেলিম কবীর (৪২), ময়মনসিংহ জেলার আবু রায়হান ও পাবনা জেলার মোহাম্মদ সুজন। রায়হান ও সুজন কারখানার এসি প্ল্যান্টে কাজ করতেন। তাদের দেহ অঙ্গার হয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শাহজালালের পুরো শরীর পুড়ে গেছে। তাঁর মরদেহের পাশে মোটরবাইকের চাবি ও অন্যান্য আলামত দেখে স্বজনেরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আক্তারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ১১ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আজ ভোরের দিকে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

অটো স্পিনিং মিলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হারুন অর রশিদ বলেন, কারখানায় আগুন লাগার পর সব শ্রমিককে নিজে বের করেছেন সেলিম কবীর। তিনি ছিলেন রিং বিভাগে উৎপাদন কর্মকর্তা। ভেতরে আর কেউ আছে কি না, তা দেখার জন্য তিনি গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে আর বের হতে পারেননি।

হারুন অর রশিদ বলেন, তাঁদের প্রচুর মালামাল, যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। ব্লু রুম থেকে ফিনিশিং পর্যন্ত যত যন্ত্র আছে, যত তুলা আছে— সব পুড়েছে।


গতকাল বিকেলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে যাওয়ার সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন, শ্রীপুর পৌর মেয়র আনিসুর রহমান, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন, শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাতেমা তুজ জোহরা।

এ ঘটনায় গতকাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিচালক শিল্প পুলিশ গাজীপুরের প্রতিনিধি (উপপরিচালক পদমর্যাদার), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা পুলিশ, শ্রীপুরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গাজীপুরের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শক এবং গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক। তাঁরা সাত দিনের মধ্যে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে প্রতিবেদন দেবেন।