রোহিঙ্গা সংকটে মালয়েশিয়ার অর্থবহ ভূমিকা চায় বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

২৫ আগস্টের রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রভাবশালী মালয়েশিয়া সরব থাকলেও সমস্যা সমাধানে জোটের ভূমিকা সব সময় প্রশ্নবিদ্ধ। গত মাসে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন ওই অভিযোগের জোরালো ভিত্তি দিয়েছে। এমন এক আবহে আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহর বাংলাদেশ সফরের সময় রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে দেশটির অর্থবহ ভূমিকার অনুরোধ জানাবে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনের সফরের শুরুতেই ৭ জুলাই কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। পরদিন ঢাকায় ফিরে সন্ধ্যায় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে এই প্রতিবেদককে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, গত মাসে থাইল্যান্ডে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের পর রোহিঙ্গা সংকটের প্রেক্ষাপটে সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহর বাংলাদেশ সফর তাৎপর্যপূর্ণ। কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, শ্রমবাজার ও কর্মীদের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত বিরতিতে আলোচনা ও যোগাযোগ চলছে। এই প্রেক্ষাপটে আগামী সপ্তাহে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকার বৈঠকে এ নিয়ে খুব বিস্তারিত আলোচনা কিংবা নতুন কোনো সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা খুব কম।

আসিয়ানের ফাঁস হওয়া প্রতিবেদন

জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি আসিয়ানের একটি প্রতিবেদন ফাঁস করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ফিরে যাবে মিয়ানমারে। ‘প্রিলিমিনারি নিডস অ্যাসেসমেন্ট ফর রিপ্যাট্রিয়েশন ইন রাখাইন স্টেট, মিয়ানমার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে রাখাইনে চলমান সংঘাত, রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সেনাবাহিনীর নারকীয় তাণ্ডবের প্রসঙ্গ আসেনি। এতে রোহিঙ্গাদের ডাকা হয়নি রোহিঙ্গা নামে, বলা হয়েছে রাখাইনের ‘মুসলিম’ সম্প্রদায়।

>

রোববার বাংলাদেশে আসছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী। রোহিঙ্গা সমস্যার পাশাপাশি শ্রমবাজার চালু করা নিয়ে আলোচনা হবে।

আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সময় দিয়ে এক অলীক সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। সনাতনী পদ্ধতিতে কাজের পরিবর্তে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হলে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফেরত পাঠাতে দুই বছরের কিছুটা বেশি সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের প্রশংসা করা হয়েছে, আর দেরির জন্য দায় চাপানো হয়েছে বাংলাদেশের ঘাড়ে।

আসিয়ানের ওই প্রতিবেদনের চরম সমালোচনা করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের প্রবল অসন্তোষের কথা আসিয়ানের দেশগুলোকে জানানো হয়েছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময়ও বাংলাদেশ তার অবস্থানের কথা আবারও তুলে ধরা হবে।

কক্সবাজারে আসছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা

রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা তাদের জানাতে কক্সবাজারে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে মিয়ানমার। জুলাই মাসের শেষ দিকে মিয়ানমারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজার সফর করবে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাও দো সুয়ান গত সোমবার সাধারণ পরিষদের এক বৈঠকে এ তথ্য জানান।

মিয়ানমারের প্রতিনিধি জানান, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পর রাখাইনে তাদের পুনর্বাসনের জন্য যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা কক্সবাজারে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বোঝানো হবে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ওই অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিশ্চিন বার্গনার বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান হচ্ছে নিরাপদ, স্বেচ্ছা আর মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন। রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ ফেরানোর দায়িত্বটা কিন্তু মিয়ানমারের।