দখলের 'নেপথ্যে' যুবলীগ নেতা

খিলগাঁওয়ের হাজীপাড়া বালুর মাঠ দখল করে রিকশা গ্যারেজ, দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলের ছবি।  প্রথম আলো
খিলগাঁওয়ের হাজীপাড়া বালুর মাঠ দখল করে রিকশা গ্যারেজ, দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলের ছবি। প্রথম আলো

খিলগাঁওয়ের হাজীপাড়া বালুর মাঠ। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে রিকশার গ্যারেজ, খাবার হোটেল, সবজির দোকান, চা–দোকান, টংঘর। এসব অবৈধ স্থাপনা থেকে প্রতি মাসে আদায় করা হয় ভাড়া। অথচ মাঠের মালিক গণপূর্ত অধিদপ্তর দখলের বিষয়টি জানেই না। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মাঠটি দখলের নেপথ্যে আছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

হাজীপাড়া বালুর মাঠের অবস্থান খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া ইকরা মসজিদের কাছে। স্থানীয় লোকজনের কাছে এটি ঝিলপাড় বালুর মাঠ নামেও পরিচিত। গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ–পূর্ব কোণে তাইজ উদ্দিনের রিকশার গ্যারেজ। এরপর সবজির বাজার। ১০টির বেশি সবজির দোকান আছে সেখানে। মাঠের দক্ষিণে নির্মাণ করা হয়েছে আরও তিনটি রিকশার গ্যারেজ। গ্যারেজগুলোর মালিক নুর ইসলাম, সুরুজ মিয়া ও ফেরদৌস। সব মিলিয়ে অন্তত দেড় শ রিকশা আছে গ্যারেজগুলোতে। এ ছাড়া মাঠে আছে চা–দোকান, খাবার হোটেল, ভাঙারির দোকান ও বস্তিঘর।

রিকশার কয়েকজন চালক ও মালিক বলেন, তাঁদের বলা হয়েছে মনিরুজ্জামান চৌধুরী সরকারের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নিয়েছেন। মনিরুজ্জামানের স্ত্রী ও তাঁর লোক হিসেবে পরিচিত জুয়েল গ্যারেজ মালিকসহ দোকানিদের কাছ থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করেন। দোকান ও গ্যারেজের ভাড়া মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিকশার গ্যারেজের একজন মালিক বলেন, ‘যুবলীগ নেতা মনির ভাই (মনিরুজ্জামান চৌধুরী) আমাদের এখানে জায়গা দিয়েছেন। ভাড়া তাঁকেই দিতে হয়। কোনো ঝামেলা হলে তাঁর লোকজন সাহায্য করে।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, আশপাশের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা দিন শেষে ওই খালি জায়গায় ময়লা–আবর্জনা ফেলেন। এতে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে মাঠের এক পাশ। তাঁরা বলেন, সন্ধ্যার পর গাঁজার গন্ধে হাজীপাড়া বালুর মাঠের ওই দিকে যাওয়া যায় না। সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত সেখানে বসে মাদকের আসর। গ্যারেজ, বস্তিঘর ও ঝিলের পাশে বিক্রি হয় বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এলাকার অনেকে বিভিন্ন নেশার সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে। চুরি–ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটছে।

স্থানীয় বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ধীরে ধীরে দোকানপাট বসিয়ে মাঠের পুরো জায়গা দখলের পাঁয়তারা চলছে।

চৌধুরীপাড়ার বাসিন্দা জামাল ভূঁইয়া বলেন, সংস্কার করে জায়গাটিকে ঈদগাহ ও খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে দখলের হাত থেকে মাঠটি রক্ষা পাবে।

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তিনি বা তাঁর পরিবারের সদস্য কিংবা লোকজন ওই জায়গা থেকে কোনো টাকা আদায় করেন না। এটা পুরোপুরি মিথ্যা অভিযোগ।

যুবলীগের এই নেতা আরও বলেন, মাটির মসজিদ এলাকায় রাস্তা ও ফুটপাতে কিছু দোকান ছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার মুরব্বিদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেসব দোকানের মালিকদের ওই খালি জায়গাটায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় তাঁদের উচ্ছেদ করতে পারে।

জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দখলের বিষয়টি আমি জানি না। আমি ওই জায়গার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখছি। দখলের প্রমাণ পেলে উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’