স্বপ্ন পূরণের আশায় গিয়ে ফিরলেন লাশ হয়ে

দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে মাসখানেক আগে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন ইমামুল হোসেন (১৯)। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। আজ বুধবার মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রাণহীন ইমামুল।

মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন ইমামুল। সেখানে তিনি নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। আজ তাঁর মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। দুপুরে জানাজা শেষে ইমামুল হোসেনের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

ইমামুল হোসেনের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার উত্তর দেউলি গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সবজিবিক্রেতা হাসান আলীর ছেলে।

হাসান আলীর দুই ছেলে। বড় ছেলে ইমামুল হোসেন কয়েক বছর আগে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন। ছোট ছেলে হাবিবুর রহমান (৮) উপজেলার উত্তর দেউলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

ইমামুল হোসেনের বাবা হাসান আলী জানান, এক মাস পাঁচ দিন আগে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় যান ইমামুল। এ জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। মাত্র দেড় বিঘা ধানি জমি আছে হাসান আলীর। সেই জমি বন্ধক দিয়ে এবং ভাইদের কাছ থেকে ধার নিয়ে টাকার ব্যবস্থা করা হয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি নির্মাণাধীন ভবনে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন ইমামুল।

গত ২৫ জুন স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওই দোতলা ভবনে রড ওঠানোর সময় পা ফসকে মাটিতে পড়ে যান ইমামুল। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। ২৭ জুন বেলা দুইটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে মারা যান ইমামুল।

ইমামুলের বাবা বলেন, ‘তরকারি বেচে ঠিকমতো সংসার চলে না। সংসার একটু ভালো করে চালাতে জমি বন্ধক রেখে, ধারদেনা করে ইমামুলকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলাম। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি কী নিয়ে বাঁচব, আর কী করে ধারদেনা শোধ করব?’

ইমামুলের চাচা হারুন অর রশিদ জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ইমামুল হোসেনের মরদেহ বাড়িতে আনা হয়। এ সময় মা হালি খাতুন ছেলের মরদেহ দেখে আহাজারি করতে থাকেন। তিনি বুক চাপড়ে বিলাপ করতে থাকেন। মাঝেমধ্যে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলেন। জ্ঞান ফিরলে বলছিলেন, ‘বাবা, তুই আমারে কী করে গেলি! আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচব?’