রিমান্ড শেষে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের ৮ জন কারাগারে

নেত্রকোনা
নেত্রকোনা

দুই দিনের রিমান্ড শেষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের গ্রেপ্তার আটজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার বেলা তিনটার দিকে তাঁদের নেত্রকোনা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালতের বিচারক জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শরিফুল হক তাঁদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

দুই দিনে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তিরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। নাম প্রকাশ করার না শর্তে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ওই চক্রটি খুবই শক্তিশালী। এর সঙ্গে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩২ জনসহ অন্তত ৬০ জনের মতো জড়িত রয়েছেন। চক্রের অন্যতম সদস্য কেন্দুয়ার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল মান্নান। তাঁরা বিভিন্ন সময় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের তিনটি পরীক্ষায় প্রতারণা করেন। নির্ধারিত পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে সর্বনিম্ন দুই থেকে পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি হয়। অগ্রিম এক থেকে দেড় লাখ টাকা নেয় চক্রটি। চাকরি চূড়ান্ত হলে বাকি টাকা পরিশোধের কথা হয়।

চক্রটি গত শুক্রবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪৫ চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করে। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রে পরীক্ষার কেন্দ্র উল্লেখ থাকায় সেখানে কমিটিতে দায়িত্ব পালন করা নির্ধারিত শিক্ষক প্রশ্নের ছবি তুলে তা মুঠোফোনে সরবরাহ করেন। পরে প্রশ্নের উত্তর ইলেকট্রনিকস ডিভাইসসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়।

প্রশ্নপত্র সরবরাহকারী ও কেন্দ্রে পরীক্ষা কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন কৃষ্ণ গোবিন্দ উচ্চবিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক ক্ষিতীশ চন্দ্র সরকার ঝন্টু, উন্মেষ উচ্চবিদ্যালয়ের কাজী আরিফুল ইসলাম রিপন ও নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আবদুল মোমেন খান। তাঁদের মধ্যে ক্ষিতীশ চন্দ্রের মাধ্যমে প্রথমে প্রশ্নটি সরবরাহ করা হয়।

গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পরীক্ষা চলাকালে কেন্দুয়া শহরের ছয়আনী এলাকায় শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া শামিমের বাড়ি থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ সময় পুলিশ ৩২ জনকে আটক করে। তাঁদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, প্রিন্টার, মুঠোফোন, ইলেকট্রনিকস ডিভাইসসহ বিভিন্ন মাল জব্দ করা হয়। পরে ওই দিন রাতে কেন্দুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা আইনে দুটি পৃথক ধারায় মামলা করেন। মামলায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৫০/৬০ জনকে আসামি করা হয়। আটক ব্যক্তিদের পরে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া লোকজনের মধ্যে ১১ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষককে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখন তা বলা যাচ্ছে না।