শ্লীলতাহানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে

নুসরাত জাহান।
নুসরাত জাহান।

নিহত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে শ্লীলতাহানির মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম ফেনীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এই মামলার একমাত্র আসামি সিরাজ উদ দৌলার উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে। মামলার পরপর নুসরাত ফেনীর বিচারিক হাকিম আদালতে ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন।

মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে নুসরাতকে আগুনে পুড়িয়ে মারার যোগসূত্র থাকার কারণে এই মামলার সাক্ষী নুসরাতের দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ও নিশাত সুলতানা, মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিন ও নাইটগার্ড মো. মোস্তফার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি এবং হত্যা মামলার আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, শাহাদাত হোসেন শামীম ও নুর উদ্দিনের ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দি, মৃত্যুর আগে নুসরাতের দেওয়া জবানবন্দিসহ (ডায়িং ডিক্লারেশন) কিছু তথ্য (ডকুমেন্ট) ব্যবহার করা হবে।

মামলার এজাহার সূত্র ও নিহত নুসরাতের দিয়ে যাওয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ মার্চ বেলা পৌনে ১১টায় মাদ্রাসার পিয়ন নুরুল আমিনকে দিয়ে ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে ডেকে পাঠানো হয়। রাফির সঙ্গে তাঁর দুই বান্ধবী নাসরিন সুলতানা ও নিশাত সুলতানাও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে যায়। অধ্যক্ষ সিরাজ তখন নুসরাতের দুই বান্ধবীকে ভেতরে ঢুকতে দেননি। নুসরাত একাই অধ্যক্ষের কক্ষে ঢোকে। সেখানে নুসরাতের গায়ে হাত দেওয়াসহ তাঁর শ্লীলতাহানি করেন সিরাজ। একপর্যায়ে নুসরাত অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বের হয়ে কান্না করতে করতে শ্রেণি কক্ষে যায় এবং সেখান থেকে বাড়ি চলে যায়।

নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, নুসরাতের শ্লীলতাহানির কথা শুনে তাঁর মাসহ কয়েকজন মাদ্রাসায় যায়। এ সময় তাঁদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ও গালমন্দের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মাদ্রাসার সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন ও সোনাগাজী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল অধ্যক্ষের কক্ষে হাজির হন। কিছুক্ষণ পর নুসরাতকে আবার মাদ্রাসায় ডেকে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দফা নুসরাত অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকেই সংজ্ঞা হারিয়ে (অচেতন) পড়ে যায়। অন্যরা তার মুখে পানি দেয়। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়লে পুলিশ মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর সিরাজকে একমাত্র আসামি করে মা শিরিন আক্তার মেয়ের যৌন হয়রানির অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন।

মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী এম শাহজাহান সাজু ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মোহাম্মদ শাহ আলম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার সত্যতা প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।