টাঙ্গাইলে ১২ কিলোমিটারে ৪০ গতিরোধক

স্থানে স্থানে গতিরোধের কারণে ধীর হয়ে যাচ্ছে যানবাহনের গতি। টাঙ্গাইল শহর থেকে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাকুয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে এমন ৪০টি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
স্থানে স্থানে গতিরোধের কারণে ধীর হয়ে যাচ্ছে যানবাহনের গতি। টাঙ্গাইল শহর থেকে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাকুয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে এমন ৪০টি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইল শহর থেকে সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাকুয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে ৪০টি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। অতিরিক্ত গতিরোধকের কারণে চরাঞ্চলের মানুষের শহরে আসতে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। এ কারণে গতিরোধকগুলো পথচারীদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

টাঙ্গাইল শহরের প্যারাডাইস পাড়া থেকে বেড়াডোমা সেতু হয়ে কাকুয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কটি সম্প্রতি সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়। রাস্তার উন্নতি হলেও মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারছে না। এ সড়কে গতিরোধকগুলো বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, প্যারাডাইস পাড়া পীরবাড়ির মোড়ে দুটি, বেড়াডোমা আবেদা খাতুন মাদ্রাসার সামনে একটি, বেড়াডোমা চৌরাস্তা মোড়ে দুটি, শহীদ মিজানুর রহমান হাইস্কুলের সামনে, বেড়াডোমা মসজিদের সামনে একটি করে গতিরোধক রয়েছে। এরপর বাসাখানপুরে কোয়াটার কিলোমিটারে ছয়টি গতিরোধক আছে। এর মধ্যে বাজার এলাকায় দুটি, সোনালীর মোড়ে দুটি এবং সর্বজনীন কালীমন্দিরের সামনে ও বাসাখানপুর সেতুর সামনে একটি করে গতিরোধক। এরপর কিছু দূর এগিয়ে গেলে লাউজানা ইলিন উদ্দিন মাদ্রাসার সামনে চিলাবাড়ি ঈদগাহ, চিলাবাড়ি বাজার, চিলাবাড়ি স্কুলের সামনে ও মসজিদের সামনে একটি করে গতিরোধক। এ রকম আরও গতিরোধক রয়েছে দাইন্যা কালীবাড়ি মোড়ে দুটি, দাইন্যা চৌধুরী গ্রামে একটি, দাইন্যা আহলে হাদিস মসজিদের সামনে একটি, বাঘিল কেকে হাইস্কুলের সামনে দুটি, বাঘিল বাজারে দুটি, চালার মোড়ে একটি, ঢাকাল শিবপুর ঘাটে দুটি, পাইকমুড়িল মাদ্রাসার সামনে দুটি, মহিশানন্দলাল গ্রামে দুটি, ওমরপুর সেতুর দুই প্রান্তে দুটি, কাকুয়া হাইস্কুলের সামনে দুটি, কাকুয়ার সোনালী মোড়ে দুটি এবং পাকমুড়িল গুচ্ছগ্রামের সামনে দুটি।

গতিরোধকগুলোর কোনোটিতেই রং দিয়ে চিহ্নিত করা নেই। ফলে রাতে চলাচল করতে গিয়ে অনেক যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, এসব গতিরোধকের কোনো অনুমোদন নেই। রাস্তা নির্মাণকাজের সময় স্থানীয় লোকজন প্রভাব খাটিয়ে এসব গতিরোধক তৈরি করিয়েছেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও শ্রমিক সমিতির নেতারা জানান, টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় আড়াই শ অটোরিকশা এ রুটে চলাচল করে। এ ছাড়া দুই শতাধিক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলে। এই ৪০টি গতিরোধকের কারণে স্বাভাবিক গতিতে কোনো যানবাহন এ রাস্তায় চলাচল করতে পারে না।

অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী বলেন, ১২ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে প্রায় এক ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ এত গতিরোধক না থাকলে এ রাস্তা ৩০ মিনিটেই পার হওয়া যেত।

এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াতকারী কাকুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা হারুন অর রশিদ বলেন, এত বেশিসংখ্যক গতিরোধের কারণে এ পথে চলাচলে চরম বিরক্তির সৃষ্টি হয়। অকারণে এত গতিরোধক নির্মাণ করা হয়েছে। বাঘিল গ্রামের হযরত আলী বলেন, গতিরোধকের কারণে এত সুন্দর রাস্তার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারছে না।

বাঘিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম জানান, এত বেশি গতিরোধকের কারণে মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। এ ব্যাপারে তিনি স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তরে জানিয়েছেন। এ ছাড়া উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার সমস্যাটির কথা তুলে ধরেছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, গতিরোধকগুলোর কারণে মানুষের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি তাঁরা জেনেছেন। এগুলো অপসারণের উদ্যোগ তাঁরা শিগগিরই নেবেন।