অটোরিকশাটি কাল হলো আল আমিনের

আল আমিন হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
আল আমিন হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ করে আল আমিন হোসেনকে এক মাস আগে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে দেন তার খালা জেসমিন। অটোরিকশা কিনতে ৫২ সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ শর্তে ঋণ দিয়েছিল স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)।

অটোরিকশা চালিয়ে ইতিমধ্যে চার সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ করেছিল আল আমিন। সেই অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতে গত মঙ্গলবার রাতে মাগুরা সদর উপজেলার কুকিলা গ্রামে ১৪ বছরের কিশোর আল আমিনকে শ্বাসরোধ ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন তরুণকে আটক করেছে মাগুরার সদর থানা-পুলিশ। আটক তিন তরুণ হলেন সদর উপজেলার ঘোড়ানাছ গ্রামের মো. শরিফুল মোল্লা (২০), জগদল গ্রামের মো. মানজাল খান (১৮) ও মহিষাডাঙ্গা গ্রামের মো. সুমন হোসেন মণ্ডল (২১)। আটক সবাই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি। খোঁজ মিলেছে চুরি যাওয়া অটোরিকশাটিও।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, বুধবার সকালে এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সদর উপজেলার কুকিলা গ্রামের শিকদার বাড়ির পাশে একটি পাটখেত থেকে আল আমিন হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সে সদর উপজেলার বেঙ্গাবেরল গ্রামের মৃত হাসানের ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর ছোটবেলা থেকে একই উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে নানা লিয়াকত আলীর বাড়িতে থাকত আল আমিন।

পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ বলেন, ‘আল আমিনের কাছ থেকে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিতেই তাকে খুন করা হয়েছে, যার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন শরিফুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি ঘোড়ানাছ গ্রামে হলেও সে থাকত মহিষাডাঙ্গা শ্বশুরবাড়িতে। ওই গ্রামেই থাকত আল আমিন।’

কিশোর আল আমিন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তরুণদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর থানা, মাগুরা, ৪ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত
কিশোর আল আমিন হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তরুণদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর থানা, মাগুরা, ৪ জুলাই। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ জানিয়েছে, শরিফুল নিজেও একজন অটোরিকশা চালক। তবে দুই মাস আগে নিজের অটোরিকশাটি বিক্রি করে দেন তিনি। এরপর থেকেই আল আমিনের অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা আঁটে শরিফুল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সঙ্গে নেন একই গ্রামের সুমন মণ্ডলকে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সারা দিনের জন্য আল আমিনের আটোরিকশা ভাড়া করেন শরিফুল। সারা দিন ঘুরে রাতে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে আল আমিনকে হত্যা করেন তাঁরা। আর এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেন শরিফুলের বন্ধু মানজাল খান।

পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ বলেন, হত্যাকাণ্ডে আরও একজন জড়িত ছিল। তাকে আটকে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। ছিনিয়ে নেওয়া অটোরিকশা ঝিনাইদহের হাট গোপালপুর পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেটি উদ্ধারে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এই অভিযোগে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত কিশোরের মা তৃষ্ণা খাতুন।