ঢাকা দক্ষিণে সৌরবাতির সোয়া দুই কোটি টাকা জলে

অচল পড়ে আছে সৌরবাতির প্যানেল। সম্প্রতি নাইটিঙ্গেল মোড়ে।  ছবি: প্রথম আলো
অচল পড়ে আছে সৌরবাতির প্যানেল। সম্প্রতি নাইটিঙ্গেল মোড়ে। ছবি: প্রথম আলো

সৌরবিদ্যুতে রাতে আলোকিত হবে নগরের রাজপথ। মূল্যবান বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এমন ধারণা থেকে নগরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে সৌরবাতি বসিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্প থেকে কোনো উপকার তো পাওয়াই যায়নি, উল্টো গচ্চা গেছে দুই কোটি টাকার বেশি।

নগরের কাকরাইল মোড় থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কে ২০১২ সালে সৌরবাতি বসিয়েছিল ডিএসসিসি। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাস না পেরোতেই অকেজো হতে থাকে বাতিগুলো। এখন একটি সৌরবাতিও জ্বলছে না। প্যানেলগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সড়কে সৌরবাতির এ প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে দরপত্রে সর্বনিম্ন ২ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকার দরদাতা পাওয়ায় পুরো টাকার আর প্রয়োজন হয়নি। ৬১টি খুঁটিতে ১২২টি সৌর প্যানেল বসানো হয়। প্যানেলগুলোতে মাত্র ৬০ ওয়াটের বাতি বসানো। অথচ এ সড়কে আগের সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল ১৫০ ওয়াটের। এ ছাড়া সোলার প্যানেল খুব নিম্নমানের হওয়ায় আকাশ মেঘাচ্ছন্ন বা কয়েক দিন বৃষ্টি হলে আর আলো পাওয়া যেত না। কাকরাইল থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কের এ প্রকল্প সফল হলে আরামবাগ, বাংলামোটর, গুলশান, হাতিরঝিল, নাবিস্কো ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তা স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ফল হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায় প্রকল্পটি আর এগোয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১২ সালে সৌর প্যানেল বসানোর পর তা আর রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। ধুলোর আস্তর জমে জমে মাসখানেক না যেতেই প্যানেলগুলো অকেজো হতে শুরু করে। সড়কের বিভিন্ন অংশ অন্ধকার হয়ে থাকত রাতে। পরে সৌর প্যানেল থেকে বাতিগুলো খুলে ফেলা হয়। এলইডি বাতি বসানো হয়।

>২০১২ সালে সৌরবাতি বসিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)
রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাস না পেরোতেই অকেজো হতে থাকে বাতিগুলো
এখন একটি সৌরবাতিও জ্বলছে না, প্যানেলগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে


ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) জাফর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, এ প্রকল্প সফল না হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)। ২০১৭ সালে তৈরি করা প্রতিবেদনে স্রেডা বলছে, রাজধানীর বাস্তবতায় এ প্রকল্প কার্যকর হবে না। ইতিমধ্যে প্যানেলগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সৌরবাতি বসালে তা কাজে লাগতে পারে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ৬১টি খুঁটিতে ১২২টি সৌর প্যানেল পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। সেগুলোতে ধুলোর আস্তর পড়েছে। সেখানে বসানো এলইডি বাতিগুলো জ্বলছে। ফকিরাপুল এলাকার বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলছেন, বাতিগুলোর বসানোর পর মাসখানেক আলো জ্বলেছিল। তবে আলো পর্যাপ্ত ছিল না। সড়কে আলো-আঁধারি পরিবেশে বরং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছিল। এরপর থেকে এগুলো আর জ্বলছে না। যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সিটি করপোরেশনকে দ্রুত সোলার প্যানেল সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব প্যানেল বসানোর আগে বুয়েট বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচক ছিলেন। তবে সৌরবাতিগুলো লাগানোর পর অতিরিক্ত ধুলার কারণে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যেত। পরিষ্কার করলে দু–তিন দিন ভালো থাকত। আবার বহুতল ভবনের কারণে শীতকালে সৌর প্যানেলে যথাসময়ে আলো পড়ত না। তাই এসব বাতি এখন জ্বলছে না। স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে সেখানে এলইডি বাতি বসানো হয়েছে।

কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই কেন এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম পরিবেশবান্ধব এ প্রকল্পটি নগরের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি করপোরেশনের খরচও কমাবে। কিন্তু ফল হয়েছে উল্টো।’

এ প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন ডিএসসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মাহতাব হোসেন। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব সোলার প্যানেল অন্য কোথাও ব্যবহারের চিন্তাভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, ধুলার কারণে এগুলো কাজ করছিল না। তাই পরে সেখানে এলইডি বাতি বসানো হয়েছে।