সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষায় এক বছর সময় পেল বাংলাদেশ

সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষায় এক বছর বাড়তি সময় পেল বাংলাদেশ। ২০২০ সালের বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ৪৪তম অধিবেশনে সুন্দরবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি হবে না, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের সুন্দরবনে আসবে। তারা সুন্দরবনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা ও পানিপ্রবাহের ওপর একটি সমীক্ষা করবে। চারপাশের শিল্পকারখানা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি না, তা মূল্যায়ন করে দেখবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল সভার বিষয়ে প্যারিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুন্দরবনকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউনেসকো। বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে।

সভার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করেছে ইউনেসকো। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাতটায় সুন্দরবন নিয়ে ১২ মিনিট ধরে আলোচনা হয়। সেখানে মোট ১১টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীসহ মোট ১০ জন উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার শুরুতে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভাপতি আঠুলফাস গারায়াভ সুন্দরবন বিষয়ে ইউনেসকোর অবস্থান তুলে ধরতে আহ্বান জানান। সেখানে সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের ১৬.৩ ধারা অনুযায়ী বিশ্ব ঐতিহ্যের পাশে বড় কোনো শিল্পকারখানা হতে দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ তা লঙ্ঘন করেছে।

তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের দুটি লাইন তুলে ধরে বলেন, ‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি’। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বিদ্যুৎ দরকার। আর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা থেকে অনেক দূরে।

সভার শেষ পর্যায়ে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ওয়াচের একজন প্রতিনিধি বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন বিশ্বের টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কেননা, বাংলাদেশ প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে কার্বন নিঃসরণ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। আর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। এটি প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনের চারপাশে ১৫৪টি শিল্পকারখানা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। কমিটি বাংলাদেশের সুন্দরবনসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) করার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ জানিয়েছে। সুন্দরবনের সুরক্ষা এবং বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির ১১ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশকে জমা দিতে হবে।

সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ সরকার যেসব অঙ্গীকার করেছিল, তা যথাযথভাবে পূরণ করা হচ্ছে না বলে জানিয়ে আসছে ইউনেসকো। এই পরিস্থিতিতে গত মাসে সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিল বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র।

গতকাল এক বিবৃতিতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা পরিবেশসম্মত না। এই প্রকল্পগুলো সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করবে। ফলে সরকারের উচিত হবে সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া।