বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আমরাও সমর্থন করি না: কাদের

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে হাইকোর্টের মন্তব্য প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কেউ সমর্থন করে না। তাঁরাও করেন না।

আজ শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।

বরগুনায় রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা বিচারবহির্ভূত হত্যা পছন্দ করি না। এতে পাবলিকের কাছে ভুল তথ্য যেতে পারে।’

গতকাল বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানিতে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার তথ্য জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। একপর্যায়ে আদালত ওই মন্তব্য করেন।

হাইকোর্টের মন্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। তিনি বলেন, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে—সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা তো দাবি করে না। এখানে এনকাউন্টারের কথা বলা হচ্ছে। এনকাউন্টার ও ক্রসফায়ার তো এক না। এখানে যা হয়েছে, তাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই বক্তব্য দিয়েছেন। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়টির কোনো যোগসূত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে কেউ পায়নি।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হাইকোর্টের মন্তব্য হাইকোর্ট করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কেউ কি সমর্থন করে? আমরাও করি না।’

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করছে ১৪ দলের শরিকেরা। একে তারা অযৌক্তিক বলেছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কিছু কারণ রয়েছে। এ খাতে প্রচুর ভর্তুকি দিতে হচ্ছে জানিয়ে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

১৪ দলের যারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিরোধিতা করছে, মূল্যবৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলছে, তাদের যৌক্তিক বিষয়গুলো অনুধাবন করার জন্য অনুরোধ করেন সেতুমন্ত্রী।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে কি না—প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পুনর্বিবেচনা করবে কি না, তা সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। আমার মনে হয় না, এটা পুনর্বিবেচনার কোনো সুযোগ আছে।’

আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে কেন্দ্র করে ওবায়দুল কাদেরের এক বক্তব্য নিয়ে সংবাদ পরিবেশনের ফলে সৃষ্ট দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আদর্শই হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের যে চেতনা, সেই চেতনা। মুক্তিযুদ্ধই আমাদের আদর্শ। এখানে সমঝোতা বা দ্বিধাদ্বন্দ্বের কোনো অবকাশ নেই। এ বিষয় নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। একটা নিউজের পরিপ্রেক্ষিতে যাঁদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল, আমার বিশ্বাস এ বিষয়ে তাঁরা এখন পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর নিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়নের প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে উত্থাপিত হয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে, রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে তারা চাপ প্রয়োগ করবে।

প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে গিয়ে মেগা দুর্নীতির জন্য চুক্তি করেছেন বলে বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারা (বিএনপি) উন্নয়ন চোখে দেখে না। এ জন্য তিনি বিএনপিকে পাওয়ারের চশমা পরার পরামর্শ দেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে বিএনপির গাত্রদাহ বেড়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে এখনো না নিয়ে বিএসএমএমইউতে রাখা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, অসুস্থতার কারণে তিনি হাসপাতালে। এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা কর্তৃপক্ষ জানবে।

খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্যারোলে মুক্তি চাইতে হবে, আর প্যারোলে মুক্তির কতগুলো নিয়ম আছে। সেই কারণগুলো থাকতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রমুখ।