রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কথা বলবে সিপিসি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও। বেইজিং, ০৫ জুলাই। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও। বেইজিং, ০৫ জুলাই। ছবি: পিআইডি

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি)। দলটির প্রভাবশালী নেতা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সং তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চীনের স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার বিকেলে দিয়াওউনতাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সিপিসি নেতা সং তাও এ আশ্বাস দেন।

সং তাও বলেন, ‘সমঝোতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে আমরা অং সান সুচিসহ মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সভায় যোগদান এবং চীনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ৫ দিনের সরকারি সফরে এখন চীন রয়েছেন।

সিপিসি নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে সং তাও আশ্বস্ত করেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় চীনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে বর্তমানে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে এবং বাংলাদেশে উন্নয়ন অভিযাত্রায় আমরা আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখব।’

সিপিসি নেতা বাংলাদেশের অত্যন্ত বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উল্লেখ করে এটা ‘বিশ্বে দুর্লভ’ বলে বর্ণনা করেন। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিগত অর্থবছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

সিপিসি ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে সং তাও আশা প্রকাশ করেন। কেবল উচ্চপর্যায়ে নয়, বিভিন্ন পর্যায়ের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল চীন সফর করবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এই সফরের মাধ্যমে দুটি দলের বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিগগিরই একটি সিপিসি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে।

বৈঠকের শুরুতেই সিপিসি নেতা চীন সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

চীনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সিপিসির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। তিনি ১৯৯৩ সালে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে চীনে তাঁর প্রথম সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, সফরের পর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় চেষ্টা করব যাতে আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক বজায় থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও চীন উভয়ের লক্ষ্য এক—দারিদ্র্য বিমোচন এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার লক্ষ্য অর্জনে অপ্রত্যাশিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা, ১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চীন সফরের কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর ভ্রমণের কথায় ভবিষ্যতে একটি ‘নতুন চীন’ তৈরি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমি সেটাই দেখছি, বঙ্গবন্ধু ভ্রমণের পর যে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এখন বঙ্গবন্ধুর ডায়েরি থেকে ‘নিউ চীন’ নামে একটি বই সম্পাদনা করছেন। তিনি বলেন, ‘চীন নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভবিষ্যদ্বাণী সংবলিত বইটি শিগগিরই প্রকাশিত হবে।’

সিপিসি নেতা বইটি চীনা ভাষাতে অনুবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তাঁরা প্রকাশ করার পর চীনা জনগণের মধ্যে বইটি বিতরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চীনা জনগণ ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তাঁর আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান, পররাষ্ট্রসচিব মো. শহিদুল হক ও চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম ফজলুল করিম অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।