নিয়োগ চূড়ান্ত করতে সভা আজ, নানা অভিযোগ

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের ৪৭তম সভা আজ শনিবার। এ সভায় প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান নিয়োগপ্রক্রিয়াসহ ১৪টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিআইপি সম্মেলনকক্ষে এ সভা শুরু হওয়ার কথা।
এদিকে রিজেন্ট বোর্ডের সভায় সম্পন্ন হতে যাওয়া নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন উঠেছে। নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ মার্চ ২৯ জন প্রভাষক, ১৬ জন কর্মকর্তা ও ২২ জন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৩১ মার্চ। বিভিন্ন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় পেছানোর পর সর্বশেষ গত মার্চে এসব পদের নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের
প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য শরীফ মাহমুদ ৩ মার্চ অস্বচ্ছতা ও নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন। এ ব্যাপারে তিনি উপাচার্য বরাবর তাঁর ভিন্নমত পোষণের কারণ উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। এতে তিনি বলেন, এ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রায় এক বছর আগে দেওয়া। এ কারণে ইতিমধ্যে যাঁরা স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন, তাঁদের প্রাপ্য ৩ নম্বর যোগ করা দরকার। কিন্তু তা করা হয়নি। পরীক্ষায় অতিরিক্ত সনদের জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকলেও পাবলিকেশনের বিষয়টিকে
গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া লিখিত পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি পর্যন্ত
বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে তিনি পরীক্ষার্থীদের নম্বর জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু তা তাঁকে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার ফজলুল হক বলেন, নিয়োগ বোর্ডে উপাচার্য সভাপতি। আরও আটজন সদস্য রয়েছেন। বোর্ডের অন্য সদস্যরা নম্বর না জানানোর পক্ষে মতামত দেন। এ কারণে শরীফ
মাহমুদকে নম্বর জানানো হয়নি। তাই বোর্ডের
একজন সদস্যের ভিন্নমত খতিয়ে দেখার সুযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি অ্যান্ড পোলট্রি সায়েন্স বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের আবেদন করেন শাকিল ইসলাম নামের একজন। তিনি এ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত ১৩ মে উপাচার্য বরাবর আইনি নোটিশ পাঠান। এতে তিনি বলেন, ২৮ মার্চ লিখিত, মৌখিক ও প্রদর্শনী ক্লাসের পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। কিন্তু তাঁকে নিয়োগের সুপারিশ না করে কম নম্বর পাওয়া প্রার্থীকে নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শাকিল বলেন, তাঁর উকিল নোটিশের জবাব না দিয়েই নিয়োগ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে রিজেন্ট বোর্ড।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, উকিল নোটিশে ওই প্রার্থী যে অভিযোগ করেছেন, তা ভিত্তিহীন। তা ছাড়া নিয়োগের বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন প্রক্রিয়া। সেখানে অন্যদের ফলাফল জানার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
এ নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, এ নিয়োগের বাছাই কমিটিতে অস্বচ্ছতা ছিল। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলেকশন কমিটি গঠন করায় যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগবঞ্চিত হয়েছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীও সুযোগ পাননি।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, সিলেকশন বোর্ড গঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে নাম প্রস্তাব করার জন্য বলা হয়। এরপর সেই নামগুলো একাডেমিক কাউন্সিলে পাস হওয়ার পর রিজেন্ট বোর্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে অনেক সময় এই সুযোগ থাকে না। এ কারণে আগে গঠিত সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমেই নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে।
প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের সভাপতি বলরাম রায় বলেন, বিজ্ঞপ্তিতে কর্মচারী নিয়োগের কথা উল্লেখ ছিল ১৬ জন। কিন্তু রিজেন্ট বোর্ডের আলোচ্যসূচিতে কর্মচারী পদে ২২ জনের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এটি নিয়মের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে অনেক বিভাগে জনবলের চাহিদা তৈরি হয়। অনেক বিভাগের আপিলের ভিত্তিতে তখন পদসংখ্যা বাড়াতে হয়। অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের বিষয়টির গুরুত্ব রিজেন্ট বোর্ডের সভায় উত্থাপিত হয়। রিজেন্ট বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগের বিষয়টির সমাধান করা হয়।