বাম জোটের হরতালে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ

হরতালের সমর্থনে মিছিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম
হরতালের সমর্থনে মিছিল। ছবি: সাইফুল ইসলাম

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল চলছে। হরতালের সমর্থনে ঢাকায় বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল, সমাবেশ ও পিকেটিং হয়েছে। হরতাল চলাকালে রাজধানীর শাহবাগের চার রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেন হরতাল-সমর্থকেরা। এতে সেখানে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঢাকার অন্যত্র যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশালে হরতালে তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের এই হরতাল আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়। চলবে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। বাম গণতান্ত্রিক জোটের এই হরতালের প্রতি নৈতিক সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।

বাম গণতান্ত্রিক জোট বলছে, অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। সিএনজির দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহনব্যয় বেড়ে যাবে। শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর কারণে শিল্পপণ্যের দাম বাড়বে।

ঢাকা
সকাল সাতটার পর থেকে পুরানা পল্টন মোড়ে হরতালের সমর্থনে অবস্থান নেন জোটের নেতা-কর্মীরা। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাঁরা গাড়ি চলাচলে বাধা দিতে শুরু করেন। এ সময় বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক হযরত আলীকে আটক করে পুলিশ। সেখানে অবস্থানরত জোটের নেতা-কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে আধা ঘণ্টা পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সাবেক ছাত্র নেতা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য লিটন নন্দী বলেন, পল্টনের মতো সারা দেশেই পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালনে বাধা দিচ্ছে। সড়কে গাড়ি চললেও হরতালে মানুষের সমর্থন আছে। জীবিকার তাগিদে মানুষ হয়তো বাইরে বের হয়েছেন। কিন্তু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা এই হরতালের প্রতি মানুষ মৌন সম্মতি দিচ্ছেন।

সকাল সাতটার দিকে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের নেতা-কর্মীরা টিএসসি থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি ঘুরে শাহবাগ মোড় অবস্থান নেন। তাঁরা সড়কে বসে পড়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সায়েন্স ল্যাব ও প্রেসক্লাব মোড় থেকে আসা যানবাহনগুলো আটকে যায়। শুধু বাংলামোটরের দিক থেকে প্রেসক্লাবের দিকে যাওয়া সড়কে যানবাহন চলছে।

রাজধানীর প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সড়কে যানবাহন চলছে স্বাভাবিক দিনের মতোই।

চট্টগ্রাম
বন্দরনগরী চট্টগ্রামে হরতালের তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। নগরের জামালখান, কাজীর দেউড়ি, জিইসির মোড়, অলংকার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। স্কুল-কলেজেও খোলা রয়েছে। নগরীর কোথাও পিকেটিং চোখে পড়েনি।

সিলেট
বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল সিলেটেও পালন হচ্ছে।

সকালে হরতাল শুরুর পর নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানচলাচল অন্যান্য দিনের তুলনায় কম।

হরতালের সমর্থনে মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা।

নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা রাস্তার মোড় আটকে পথসভা করেন।

তার আগে সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সিপিবি, বাসদ, বাসদ মার্কসবাদীসহ সম্মিলিত বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা নগরের বন্দরবাজার এলাকা থেকে মিছিল বের করে। মিছিলটি নগরের কিনব্রিজ, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজার, ধূপাদিঘীর পাড় হয়ে ফের বন্দরবাজার কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। এ সময় কোর্ট পয়েন্ট এলাকার মোড় আটকে পথসভায় বক্তব্য দেন নেতা-কর্মীরা।

সকাল থেকে সিলেট নগরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান করছে পুলিশ।

নগরের বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবীবাজার, লামাবাজার, শেখঘাট, তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, নয়সড়ক, কুমারপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানচলাচল করলেও তা সংখ্যায় কম। সড়কে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস চলাচল করছে। হরতাল চলাকালে পিকেটিংয়ের চিত্র চোখে পড়েনি।

সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা বলেন, হরতালে বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মাঠে রয়েছে।

বরিশাল
হরতালে বরিশালে নগরে তেমন প্রভাব পড়েনি। সকাল থেকে নগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা।

ভোর ছয়টা থেকে নগরের সদর রোডের কাকলির মোড় ও জেলখানা মোড় এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখতে চালকদের অনুরোধ জানান হরতাল-সমর্থকেরা। সকাল সাড়ে ছয়টায় জেলখানা মোড়ে হরতালের সমর্থনে লাল পতাকা নিয়ে মিছিল বের হয়।

সকাল সোয়া আটটার দিকে কাকলির মোড়ে অবস্থান নেওয়া হরতাল-সমর্থকদের হটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে কাকলির মোড়ের সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

সমাবেশে বাসদের জেলা সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী বলেন, হরতালের সমর্থনে সকাল থেকে তাঁরা রাজপথে নামার পর বেশ কয়েক দফা পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।

গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার আহ্বায়ক দেওয়ান আবদুর রশিদ নিলু বলেন, এই হরতালে রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের সমর্থন থাকা উচিত। কারণ, এ হরতাল শুধু তাঁদের নয়, রাষ্ট্রের প্রতিটি জনগণের জন্য। আজ গ্যাসের দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বাড়বে। যার প্রভাব প্রতিটি মানুষকে ভোগ করতে হবে।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবির মিজানুর রহমান, কমিউনিস্ট লীগের জলিলুর রহমান প্রমুখ।

হরতালে লঞ্চ ও বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলছে। নগরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।