যমুনা গিলছে মানুষের বসতভিটা, জমি

সারিয়াকান্দি উপজেলার পাকুরিয়া চর এলাকায় যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে।  প্রথম আলো
সারিয়াকান্দি উপজেলার পাকুরিয়া চর এলাকায় যমুনা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রথম আলো

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বর্ষা শুরু হওয়ার পর তিন সপ্তাহে যমুনা নদীর বাঁ ও ডান তীরে প্রবল ভাঙনে প্রায় ৫০০ পরিবারের বসতভিটা এবং ১ হাজার একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই যমুনা নদীর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর বাঁ তীরে মানিকদাইর থেকে পাকুরিয়ার চর হয়ে ধারাবর্ষার চর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে যমুনার ডান তীরের উত্তর শিমুলতাইড় চর, চর বহলাডাঙ্গা, সুজনের পাড়া, কাকলিহাতা, চকরতিনাথ ও দীঘিপাড়াচর। গত দুই বছরে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৬ হাজার বসতভিটা ও ১০ হাজার একর আবাদি জমি।

গতকাল সকালে সরেজমিনে যমুনা নদীর বাঁ তীরের কাজলা ইউনিয়নের মানিকদাইর থেকে জামথল, বেড়া পাঁচবাড়িয়া, উত্তর টেংরাকুরা, চর ঘাগুয়া, পাকুরিয়া চর, শনপচার চর পর্যন্ত ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যমুনায় প্রবল স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এতে তীরের মাটি ও বালুর স্তূপ ধসে পড়ছে নদীতে। বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী ফসলি জমি ও শত বছরের লোকালয়। ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র সবচেয়ে বেশি পাকুরিয়ার চরে। যমুনার প্রবল ভাঙনে এই চরের শত শত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

পাকুরিয়ার চরে দুপুরের দিকে নদীতীরে বসে কূল ভাঙার দৃশ্য অপলক দৃষ্টিতে দেখছিলেন কৃষক আজিম উদ্দিন। তাঁর মুখে পৈতৃক একখণ্ড জমি হারানোর শঙ্কা। পাকুরিয়ার চরের প্রান্তিক এই কৃষক বলেন, গত দুই বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তাঁর ১৪ বিঘা জমি।

ষাটোর্ধ্ব বয়সী কৃষক কালাম শেখ বলেন, গত দুই বছরে ছয় বিঘা আবাদি ছাড়াও ভিটেমাটি গিলেছে যমুনা। সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব তিনি।

কাজলা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাজাহান আলী বলেন, যমুনার ভয়াবহ ভাঙনে পাকুরিয়ার চর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। গত তিন বছরে এই চরের প্রায় এক হাজার একর আবাদি জমি, ৫০০ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে।

কর্নিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহার আলী মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, যমুনার বাঁ তীরবর্তী মানিকদাইর চর থেকে ধারাবর্ষার চর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীর রক্ষায় কোনো বাঁধ নেই। এতে প্রতিবছর যমুনার প্রবল ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চরাঞ্চলের জনপদ ও ফসলি জমি।

ভাঙনের ভয়াবহ চিত্র ডান তীরেও

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত তিন সপ্তাহে প্রবল ভাঙনে চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের সুজনেরপাড়া বাজার এখন প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বাজার, দোকানপাট ছাড়াও অর্ধশত বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছে। যমুনার ভাঙনে ভাঙ্গুরগাছা চরের শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে বহলাডাঙা চর, শিমুলতাইড়, শিমুলবাড়ি, কাকালিহাতা, চকরথিনাথ, দীঘাপাড়া ও খাটিয়ামারি চরও।

চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রেজাউল করিম বলেন, যমুনার প্রবল ভাঙনে গত তিন সপ্তাহে তাঁর ওয়ার্ডের চালুয়াবাড়ি, কাকালিহাতা, সুজনেরপাড়া ও আউচারপাড়া চরে শতাধিক মানুষ বসতভিটা হারিয়েছে। এক বছরে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০০ বসতবাড়ি।