খসে পড়ছে ভবনের পলেস্তারা

কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এই ভবনে ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলে পাঠদান। ছবিটি গতকাল তোলা।  প্রথম আলো
কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে এই ভবনে ছাদ থেকে প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলে পাঠদান। ছবিটি গতকাল তোলা। প্রথম আলো

ভবনে ফাটল, কখন যেন ভবনটি ভেঙে পড়ে। এই বুঝি ছাদ থেকে পলেস্তারা পড়ল। প্রকৌশল বিভাগ থেকেও ভবন ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়েছে। প্রতিনিয়ত এসব চিন্তা মাথায় নিয়েই সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীরাও থাকে আতঙ্কে। 

এ অবস্থা ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শহরের কোটচাঁদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের। প্রকৌশল বিভাগ থেকেও ভবনটি ব্যবহারে আপত্তি জানানো হয়েছে। 

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। নারীশিক্ষার অগ্রগতির জন্য স্থানীয় কিছু শিক্ষানুরাগী জমি দান করে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৫১ জন ছাত্রী পড়ালেখা করছে। আর ৩৫ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন। বিদ্যালয়ের নিজস্ব ২ দশমিক শূন্য ৯ একর জমির মধ্যে ৪৯ শতকে বিদ্যালয় ভবন ও খেলার মাঠ রয়েছে। প্রতিষ্ঠার সময় বিদ্যালয়টি টিনের ঘর থাকলেও ১৯৬০-এর দশকে সেখানে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। দৈর্ঘ্য ১৪০ ফুট আর প্রস্থ ২৯ ফুটের এই ভবনটি বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে অবস্থিত। এই ভবনে ১২টি কক্ষ রয়েছে, যার মধ্যে আটটি শ্রেণিকক্ষ, তিনটি ল্যাব ও একটি অফিস কক্ষ; যে ভবনে নিয়মিত ৬০০ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এ ছাড়া ল্যাব ও পাঠাগার ব্যবহার করছে মেয়েরা। এই ভবনটিই বর্তমানে পরিত্যক্ত। এ ছাড়া দক্ষিণ পাশে আরেকটি দ্বিতল ভবন রয়েছে, যার মোট কক্ষ ছয়টি, এর মধ্যে বিজ্ঞানাগার একটি ও ল্যাব একটি। এই ভবনে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী ক্লাস করে। 

বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, তারা যখন ক্লাসে থাকে, তখন চোখ থাকে মাথার ওপর; কখন ছাদ থেকে কিছু খুলে পড়ে। এ ছাড়া ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ, এটা শোনার পর তাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করে। তাদের এই আতঙ্কের কথা শিক্ষকদের বললে তাঁরা নতুন ভবনের জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানান। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও ভবন না হওয়ায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গেছে। 

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা কম। যে কারণে চার বছর আগে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে এতগুলো শিক্ষার্থীকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে তাঁরাও আছেন ঝুঁকিতে। কিছু একটা ঘটে গেলে অভিভাবকদের কী কৈফিয়ত দেবেন। এ অবস্থায় প্রতিষ্ঠানে ঠিকমতো পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইসাহক আলী জানান, ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী এই বিদ্যালয়ে আসেন। ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রতিবেদন দেন, বিদ্যালয়ের ওই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী। এমনকি ওই দপ্তর থেকে তাঁদের চিঠি দিয়ে ভবনটি ব্যবহার না করার জন্য জানিয়ে দেওয়া হয়। এরপর এক মৃদু ভূমিকম্পে ভবনটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেয়। পলেস্তারা খুলে খুলে পড়তে থাকে। এ অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমিকম্পে ভবনটির ক্ষতির কারণ যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু আজও নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে তাঁরা সেই ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো ভবনেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। 

ইসাহক আলী আরও বলেন, বাচ্চারা যখন ক্লাস করে, তখন তাঁরা আতঙ্কে সময় পার করেন। সারাক্ষণ তাঁদের ভাবনা, কখন ভবনটি ধসে পড়ে। তিনি জানান, মাঝেমধ্যেই ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে পড়ে। ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ছাদ থেকে পলেস্তারা খুলে মেয়েদের মাথায় পড়ে। এতে পাঁচজন মেয়ে গুরুতর আহত হয়। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে দ্রুত একটি ভবন নির্মাণ জরুরি। 

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রতন মিয়া জানান, উচ্চপর্যায় থেকে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভবন প্রয়োজন, এগুলো তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। তাঁরা এগুলোর তালিকা করে পাঠিয়ে দেন। নতুন ভবন বরাদ্দের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে চেষ্টা করে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারেও চেষ্টা চলছে বলে তিনি শুনেছেন।