হরতালে মরিচা ধরে গেছে: কাদের

ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি
ওবায়দুল কাদের। ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, রাজধানী ঢাকায় আজ প্রতিদিনের পরিচিত যানজটের দৃশ্যই বিরাজমান ছিল। কাদের বলেছেন, যারা হরতাল দিয়ে আন্দোলনের কথা ভাবে, তাদের হিসাবে ভুল আছে। হরতাল আর গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কার্যকর হাতিয়ার নয়। হরতালে মরিচা ধরে গেছে।

আজ রোববার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। রাজধানীর ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সভা শেষে অনুষ্ঠিত হয় এ সংবাদ সম্মেলন।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ সারা দেশে আধাবেলা হরতাল ডেকেছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। হরতাল পালনের শেষ পর্যায়ে রাজধানীর পল্টনে সমাবেশ থেকে বাম নেতারা গ্যাসের দাম কমানোর দাবি জানান। তাঁদের দাবি না মানলে ১৪ জুলাই জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচিও দেওয়া হয়।

কাদের আজকের সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মূল্য সমন্বয়ের জন্যই যৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এরপরও সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে।’ এ সময় পাশে থাকা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘তেল দেবেন কম, ভাজা খাবেন মচমচে, এটা হয় নাকি?’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘এলএনজি ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে’ অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এটা বিরোধীদের গতানুগতিক বক্তব্য।’

গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না? জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ভোটের রাজনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এ কথা ভেবে আমরা রাজনীতি করি না। আমরা রাজনীতি করি, সঠিকভাবে, বাস্তবসম্মত, যুক্তিসংগত বিষয় বিবেচনা করে, জনগণের স্বার্থে। জনগণের স্বার্থ দেখতে কতগুলো বিষয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। সবকিছু মিলে দেশ একটা সুষম অবস্থায় আছে।’

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের লাগাম টেনে ধরার কথা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের ক্ষেত্রে আশকারা পেলে এর প্রবণতা বাড়ে। তাদের বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের কার্যনির্বাহী সভার পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করা নেতাদের শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ এমপি ও মন্ত্রী হয়ে দলের বিরুদ্ধে কাজ করলে, তাঁকে ভবিষ্যতে মনোনয়ন দেওয়া না–ও হতে পারে। মন্ত্রী করা নাও হতে পারে। এভাবেও তাঁকে অগুরুত্বপূর্ণ করা যায়। শাস্তি মানেই দল থেকে বহিষ্কার নয়, নানা রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

‘সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছে’, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিচার বিভাগ স্বাধীন ও কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। খালেদা জিয়ার বিষয়ও বিচার বিভাগের বিষয়। রায় তাঁদের বিপক্ষে গেলেই তাঁরা বিচার মানেন না।’

ওবায়দুল কাদের জানান, বৈঠকে ১৫ আগস্ট সামনে রেখে মাসব্যাপী কর্মসূচি, জাতীয় সম্মেলনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি, বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কারও কারও অবস্থানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি জানান, দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান ২১ জুলাই শুরু হবে। তবে এর আগে এ বিষয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করা হবে। দলে কিছু সাংগঠনিক সমস্যা রয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো জাতীয় কাউন্সিলের আগে নতুন করে করা হবে। নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তুতি ও লক্ষ্য নিয়েই তাঁরা এগোচ্ছেন বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সবুর, আইনবিষয়ক সম্পাদক রেজাউল করিম, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ–দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।