বৃদ্ধ মাকে মারধরের অভিযোগে ছেলে আটক

পঞ্চগড়ে শতবর্ষী মাকে মারধরের অভিযোগে মো. ফারুক হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ। আজ রোববার দুপুরে পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে তাঁকে আটক করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশ।এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, গতকাল শনিবার রাতে ওই মা তাঁর ছেলে ফারুক হোসেন, পুত্রবধূ ইনছানা বেগম (৩৫) এবং নাতি ইসমাইল হোসেনের (২২) বিরুদ্ধে তাঁকে মারধর করে স্বামীর ভিটেছাড়া করার চেষ্টার অভিযোগে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী মা হফেজা বেওয়া (১০০) বর্তমানে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে থানাহাজতে থাকা অভিযুক্ত ছেলে ফারুক হোসেন তাঁর মাকে মারধর করেননি বলে দাবি করে বলেন, বাড়ি ভিটের জমিজমা নিয়ে ভাইদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে অন্য ভাইয়েরা তাঁর মাকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন।

খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিন আজ দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বৃদ্ধ মাকে দেখতে যান। নির্যাতিতা বৃদ্ধ ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতনের বর্ণনা দেন জেলা প্রশাসককে। এ সময় জেলা প্রশাসক চিকিৎসকদের কাছে তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য নগদ ১০ হাজার টাকা দেন।

লিখিত অভিযোগ এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা হফেজা বেওয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি ইউনিয়নের ফুলপাড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি। ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ের মধ্যে সবার বিয়ে হয়েছে। ১২ বছর আগে স্বামী সালাউদ্দিন মারা গেছেন।

ছেলেরা সবাই পৃথকভাবে বসতবাড়ি করে যে যাঁর মতো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার করছেন। বড় দুই ছেলে পঞ্চগড় শহরে বাড়ি করে থাকেন। বাকি ৩ ছেলে বাবার ভিটাতেই বাড়ি করে আছেন। হাফেজা বেওয়া ছোট ছেলে ফারুকের ঘর ঘেঁষে স্বামীর ভিটায় বাঁশের বেড়া-চাটাইয়ের একটি টিনের ঘরে একা থাকেন। তবে খাওয়াদাওয়া করেন মেজ ছেলে শফিউল্লাহর বাড়িতে। স্বামীর ভিটা ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নন শতবর্ষী এই নারী। কিন্তু ছোট ছেলে ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী ইনছানা বেগম বাড়ির কাছ থেকে হাফেজাকে সরাতে দীর্ঘদিন ধরেই নির্যাতন করে আসছেন। কারণে-অকারণে বকাঝকা করা এমনকি মারধর পর্যন্তও করে করতেন।

গতকাল সকালে ফরুক হোসেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ওই হাফেজা বেওয়ার শোয়ার ঘর ভাঙতে থাকেন। এতে বাধা দিতে গেলে ছেলে ফারুক হোসেন তাঁকে এলোপাতাড়ি চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন এবং ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেন। পরে তাঁর মেজ ছেলে শফিউল্লাহসহ অন্যরা এগিয়ে এসে হাফেজা বেওয়াকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাফেজা বেওয়া বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে ফারুক, তার স্ত্রী ইনসানা ও তাদের ছেলে হৃদয় আমার ওপর খুব নির্যাতন করে। আমাকে ধরে মারে। এর আগে একদিন ছেলের স্ত্রী ইনসানা আমার শৌচাগারের বদনার পানিতে মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে রেখেছিল। প্রায় ১৫ দিন আগে নাতি হৃদয় আমার কুঁড়েঘরটার একাংশ ভেঙে দেয়। এ সময় একটা বড় বাঁশ ভেঙে আমার মাথায় পড়ে আহত হই। এক মাস আগেও আমাকে ওরা কিলঘুষি মেরেছিল। আমি কানে কম শুনি, অসুস্থ, চলতে পারি না। এই বয়সে ছেলে ও বউমার নির্যাতন আর সহ্য তরতে পারছি না।’

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা প্রতীক কুমার বণিক বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই বৃদ্ধাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শারীরিক অবস্থার ভালোর দিকে। তিনি এখন আশঙ্কামুক্ত।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পঞ্চগড় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীন উজ জামান বলেন, শনিবার রাতেই নির্যাতিত ওই নারী ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতির বিরুদ্ধে মারপিটের একটি অভিযোগ দেন। রোববার দুপুরে অভিযুক্ত ছেলে ফারুক হোসেনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনার অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।