রোহিঙ্গাদের আলোচনাতে নিয়েই প্রত্যাবাসন চায় মালয়েশিয়া

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের (ডানে) সঙ্গে বৈঠক করেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। ঢাকা, ৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের (ডানে) সঙ্গে বৈঠক করেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ। ঢাকা, ৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

মালয়েশিয়া মনে করে, পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়াতেই মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজনকে আলোচনায় যুক্ত রাখতে হবে। আর এ বছরের শেষে আসিয়ানের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে পরিকল্পনা, সেটা অবশ্যই রোহিঙ্গাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। 

রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেছেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারকে বোঝাতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি। তাঁরা এ ব্যাপারে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন।

রোহিঙ্গা সমস্যার সবশেষ অবস্থা দেখতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ শনিবার তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। সফরের শুরুতে তিনি ওই দিন কক্সবাজার যান। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর রোববার বিকেলে তিনি ঢাকায় ফেরেন। এরপর সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা যায় কিনা তা নিয়ে আলাপ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল রোহিঙ্গা আর জনশক্তি।
এ কে আবদুল মোমেন বলেন, আসিয়ানের (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা) পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে উনি আমাদের হয়ে কাজ করবেন। মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ মনে করে রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের ফেরত যাওয়া। তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আহা সেন্টারের (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় মানবিক সহায়তা বিষয়ক আসিয়ানের সমন্বয়ক কেন্দ্র) সবশেষ প্রতিবেদনের বিষয়ে মালয়েশিয়া যথেষ্ট সমালোচনামুখর। কারণ কারণ ওই প্রতিবেদনে রাখাইনের আট শ গ্রামের মধ্যে মাত্র দুটি গ্রামের বর্ণনা আছে। চারে চার শ-পাঁচ শ গ্রামের যেগুলো পুড়ে গেছে তার কোনো বর্ণনা নেই। আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা তাদের মিয়ানমারকে বোঝাতে বলেছি। তারা এ ব্যাপারে কাজ করার কথা জানিয়েছেন। জবাবদিহি নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা আমাদের সমর্থন দিয়েছেন। এ জন্য যা যা করার তারা সব করবেন।’

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ বলেন, আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আসিয়ানের প্রেক্ষাপটে আমরা কি করছি, তা আমি আলোচনায় উল্লেখ করেছি। প্রত্যাবাসন যে দ্রুত শুরু হওয়া উচিত এ নিয়ে আমরা দুই পক্ষ একমত হয়েছি। আমি এটাও বলেছি, পরিকল্পনার পর্যায় থেকে শুরু করে প্রত্যাবাসনের পুরো প্রক্রিয়াতেই অবশ্যই রোহিঙ্গাদের আলোচনায় যুক্ত রাখতে হবে। আসিয়ানসহ বাইরে থেকে আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। কিন্তু দিনের শেষে রোহিঙ্গাদের বুঝতে হবে তাদের ফিরে যাওয়া উচিত। আমরা আলোচনা করছি কীভাবে মিয়ানমারকে রাজি করানো যায়, এবং এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি।

প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ ফেরাতে মিয়ানমারকে কীভাবে রাজি করানো হবে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ ফেরাতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, এ বছরের শেষ দিকে প্রত্যাবাসনের জন্য যথাযথ ও সমন্বিত একটি পরিকল্পনা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমি আশা করব আহা সেন্টার এ বছরের শেষে আরও সমন্বিত পরিকল্পনা সামনে নিয়ে আসবে যা রোহিঙ্গাদের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু আহা সেন্টারের প্রতিবেদন তো এরই মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া এ প্রতিবেদন নিয়ে যথেষ্ট সমালোচনামুখর। এ জন্যই তো একটু আগে বলেছি আহা সেন্টারকে আরও সমন্বিত সুপারিশ সামনে আনতে হবে। এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই, এ মুহূর্তে আস্থা সংকট আছে। লোকজন তো ফিরে যেতে চায়। তাদের যাওয়াটা নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ হোক এটাও তারা চান। তাই এ ক্ষেত্রে কি করা যেতে পারে তা নিয়ে আমরা মতবিনিময় করেছি।

বাজার খুলছে আগস্টে!
অনিয়মের অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ায় বন্ধ হয়ে পড়া বাংলাদেশের শ্রমবাজার আগস্টে খোলার ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আবদুল মোমেন বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার নিয়ে আলাপ করেছি। তাদের বলেছি, নতুন করে লোকজন নিচ্ছেন না। তারা সমন্বিতভাবে এটা করার জন্য কাজ করছেন যার নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ভবিষ্যতে কীভাবে নেবেন এটা ঠিক করবেন। আশা করছেন, আগস্টে দরজা আবার খুলে যাবে।

তবে আগস্টেই বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার বাজার খুলছে কিনা সেটা স্পষ্ট করেননি মালয়েশিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সাইফুদ্দিন বিন আবদুল্লাহ বলেন, নতুন সরকার এসেছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া উন্নততর করতে আমরা কাজ করছি। আমরা বিদেশি শ্রমিকদের বেতন আর কল্যাণের দিকটি নিয়েও কাজ করছি।