শিক্ষককে লাঞ্ছনায় বাকি ২০ জন কি বেঁচে যাবেন?

‘আমাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সব মিলিয়ে ২১ শিক্ষার্থী জড়িত। তাঁদের মধ্যে ঘটনার দিন তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে ১২ শিক্ষার্থীর নাম বলেছিলাম। কিন্তু এখনো একজন কেন আটক?’ এই প্রশ্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের। তাঁকে যাঁরা অপমানিত করেছেন, সবার শাস্তি চান তিনি।

প্রবীণ এই অধ্যাপক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার এক দল শিক্ষার্থীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার পর অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে নিয়ে যান সহকর্মীরা। এ সময় পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। পুলিশ মাসুদ মাহমুদের কাছে জানতে চায় কারা কারা তাঁকে লাঞ্ছিত করেছেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ১২ জনের নাম বলেন। তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি অনুরোধ জানান।

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ গতকাল রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাঞ্ছিতের ঘটনায় আমি কিছুটা বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিলাম। তাই মোট ২১ জন জড়িত থাকলেও তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে ১২ জনের নাম স্পষ্ট করে বলেছিলাম। তাঁরা নামগুলো কাগজে টুকেও নিয়েছিল। কিন্তু ঘটনার দিন একজনকে গ্রেপ্তার করা ছাড়া কাউকে আর আটক করা হয়নি। ওদের কি ধরা হবে না। ওরা কি বেঁচে যাবেন?’

মাসুদ মাহমুদ প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘খবরের কাগজে দেখলাম শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সারা দেশের বিশিষ্টজন ও শিক্ষকেরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারপরও জড়িতদের গ্রেপ্তারে তৎপরতা নেই কেন?’

এ বিষয়ে খুলশী থানার ওসি প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের সঙ্গে পুনরায় বসব আমরা। পাশাপাশি ঘটনার ভিডিও সংগ্রহ করা হবে। এরপর আরও যাঁরা জড়িত ও ইন্ধনদাতা আছেন, তাঁদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করার পর ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগের দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। ইউএসটিসিতে যোগদানের পর তিনি বিভাগের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছু উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে কিছু শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারান। এ ছাড়া দক্ষতার প্রশ্ন ওঠায় চাকরিচ্যুত হন কয়েকজন শিক্ষক। এসবের পেছনে মাসুদ মাহমুদের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। গত এপ্রিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামেন কিছু শিক্ষার্থী। এই শিক্ষার্থীরাই গত মঙ্গলবার প্রবীণ এ অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করেন। পরে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন মাহমুদুল আলম নামের এক শিক্ষার্থী। ঘটনার দিনই ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তবে অন্যরা এখনো অধরা।

অবশেষে ইউএসটিসির উদ্বেগ

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার পাঁচ দিনের মাথায় গতকাল ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার দিলীপ কুমার বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় ইউএসটিসির সব শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।

গত শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনায় আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধনেও বক্তারা ইউএসটিসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ কিংবা সভা-সমাবেশ না করা নিয়েও ক্ষোভ জানান।

তবে এত দিন পর ইউএসটিসির দেওয়া এই বিবৃতি নিয়ে ক্ষোভ আছে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (ইউএসটিসি কর্তৃপক্ষ) আমার সঙ্গে দেখা করে একটু সহানুভূতি জানানো তো দূরের কথা, একবার ফোনও করেনি। এত দিন পর আর উদ্বেগ জানানোর কি দরকার?’

আরও পড়ুন