বছরের ১০ মাস জলাবদ্ধতা থাকে মাঠে, খেলা বন্ধ

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতা। গত শনিবার দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জলাবদ্ধতা। গত শনিবার দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো
>ওই এলাকার আশপাশের মানুষ বাড়িঘরে মাটি ফেলে উঁচু করে ফেলেছে। যে কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে চারতলার একটি একাডেমিক ভবন হবে। তখন মাঠ ভরাট করা হবে। এখন মাঠ ভরাট করলে ক্লাসরুমে পানি ঢুকে যাবে। এই বিদ্যালয়ের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুতই আমরা কিছু একটা করতে পারব।

পুরো মাঠে পানি থইথই। কোথাও গোড়ালিসম পানি; কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। এ পানিতে হাঁসের ঝাঁক ডুবসাঁতারে মেতে উঠছে। মাঠটি বছরের ১০ মাসই জলাবদ্ধ থাকে। এ কারণে মাঠে কোনো খেলাধুলা হয় না।
এটি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর মাঠ। মাঠের পাশে কাদা জমে আছে। কাদাপানির ওপর দিয়েই শিশুশিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে আসা-যাওয়া করেন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই বছর ধরে জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদে মাঠ বরাদ্দের জন্য আবেদন করে। এতে কোনো সাড়া মেলেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগ নিয়েই বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।
গত শনিবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে বিদ্যালয়ে জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে ৪০ শতক জায়গা নিয়ে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৮ জন শিক্ষক ও ১৯৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয়ের পূর্ব কোণে তিন কক্ষের টিনশেডের একটি ভবন এবং পশ্চিম পাশে একটি একতলা পাকা ভবন রয়েছে। মাঝখানে বিদ্যালয়ের মাঠ। ডুমুরিয়া-চাঁদপুর এলাকা থেকে একটু নিচু স্থানে এই বিদ্যালয়ের অবস্থান। পুরো মাঠে পানি জমে আছে। বাতাসে পচা পানির উৎকট গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাক চেপে বসে আছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মাঠে জলাবদ্ধতার কারণে এই বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি হয় না। দুই শিফটের এই বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দুটি বিদ্যালয় ভবনের বারান্দায় আলাদা করে দাঁড় করিয়ে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। শিশুরা এই মাঠে কোনো খেলাধুলা করতে পারছে না।
এদিকে গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক মাসুদা বেগম কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য আবেদন করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যালয়ের মাঠটি জলাবদ্ধতার কারণে বছরের অধিকাংশ সময়ই পানির নিচে থাকে। ফলে দৈনিক সমাবেশ ও শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা পরিচালনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। এই অবস্থায় মাঠ ভরাট করে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ত্বরান্বিত করা হোক। এর আগে ১১ সেপ্টেম্বর আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অনুরূপ চিঠি দেওয়া হয়। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী বলে, ওরা খেলতে পারে না। কাদায় ওদের বই ও পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। বৃষ্টি হলে অনেকে ক্লাসে আসে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা বেগম বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে দেখে আসছি, এখানকার মাঠে বছরের ১০ মাসই জলাবদ্ধতা থাকে। এতে করে অ্যাসেম্বলি ঠিকমতো করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলাও করা হচ্ছে না। প্রতিদিনই নজর রাখতে হয় শিশুদের প্রতি। কখন কার সন্তান বিদ্যালয় মাঠে পড়ে যায়। দ্রুত মাঠ ভরাট করা হোক। জলাবদ্ধতাই এখন প্রধান সমস্যা।’ সহকারী শিক্ষক মাহফুজা আক্তার ও তাহমিনা আক্তার বলেন, এই বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতা, অবকাঠামো সমস্যা ও বেঞ্চ সমস্যা রয়েছে। পরিবেশ আরও উন্নত করা গেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ত। জলাবদ্ধতার কারণে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘৮১ বছরের পুরোনো এই বিদ্যালয়ে এত দিন সীমানাপ্রাচীর ও ফটক ছিল না। বর্তমানে সীমানাপ্রাচীর ও ফটক নির্মাণ করা হয়েছে। এখন জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য মাঠ ভরাট জরুরি। ’
আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই এলাকার আশপাশের মানুষ বাড়িঘরে মাটি ফেলে উঁচু করে ফেলেছে। যে কারণে বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে চারতলার একটি একাডেমিক ভবন হবে। তখন মাঠ ভরাট করা হবে। এখন মাঠ ভরাট করলে ক্লাসরুমে পানি ঢুকে যাবে। এই বিদ্যালয়ের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আশা করি দ্রুতই আমরা কিছু একটা করতে পারব।’