'গ্রামের নাম চট্টগ্রাম'

উড়ালসড়কের নিচে কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে সড়ক। গতকাল দুপুর ১২টায়।  সৌরভ দাশ
উড়ালসড়কের নিচে কোমরসমান পানিতে ডুবে আছে সড়ক। গতকাল দুপুর ১২টায়। সৌরভ দাশ

বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতায় নগরবাসী দিনভর নরকযন্ত্রণা ভোগ করেছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকালে স্ব স্ব কাজকর্মে যেতেও ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাসাবাড়ি, দোকানপাট এমনকি হাসপাতালও জলাবদ্ধতা থেকে বাদ যায়নি। 

ভোগান্তিতে অতিষ্ঠ মানুষের শেষ আশ্রয় যেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সেখানে জলাবদ্ধতা নিয়ে কষ্টের কাহিনি যেমন লিখেছে তেমনি বিদ্রূপ করেছেন স্ট্যাটাস কিংবা মন্তব্য লিখে। ‘প্রাকৃতিক সুইমিং পুল, সমুদ্রসৈকত ইত্যাদি বিশেষণে নগরকে বিশেষায়িত করেছেন ফেসবুকে। 

জাদুশিল্পী রাজীব বসাক ওয়াসার একটি সতর্কীকরণ বোর্ডের ছবিসহ পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ‘উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে চট্টগ্রাম। (বি.দ্র. সাঁতার না জানলে চট্টগ্রাম ভ্রমণ নিরাপদ নয়। সৌজন্যে: চট্টগ্রাম ওয়াসা।)’

মো. আবদুল মোমিন নামে এক ব্যাংকার লিখেছেন, ‘এত উন্নয়ন রাখব কোথায়? শুনেছি চট্টগ্রামের উন্নয়নে হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কথা। দায়িত্ব সব বীর সম্প্রদায়ের ওপর ন্যস্ত ছিল। বীরদের এ সমস্ত কর্ম চোখে দেখা যায় না। শুধু বৃষ্টি হলে, জোয়ার আসলে ভেসে থাকা যায়। বীর ধর্ম, বীর কর্ম বলে কথা! প্রকল্পের টাকা কোন ব্যাংকে তা জেনেও লাভ নাই! শুধু জানি নগরী পানির নিচে তলিয়ে আছে। আমরা লখিন্দরেরা ভাসছি।’

ঢেউ তুলে চলছে িবআরটিসির দোতলা বাস। গতকাল দুপুর ১২টায়।  প্রথম আলো
ঢেউ তুলে চলছে িবআরটিসির দোতলা বাস। গতকাল দুপুর ১২টায়। প্রথম আলো

বৃষ্টিতে নগরের পানি ওঠেনি এমন এলাকা খুঁজে পাওয়া ছিল দুষ্কর। সব জায়গায় ছিল পানি আর পানি। রফিকুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিক দুপুরে লিখেছেন, স্টিলমিল থেকে সিমেন্ট ক্রসিং সড়কে কোমরসমান পানি, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে রুবি সিমেন্ট গেট এলাকায় গলাসমান পানি।

নোমান খালেদ চৌধুরী নামে একজন চিকিৎসক কোমরসমান পানিতে নারী-পুরুষের দুর্ভোগের ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর সৌভাগ্য দেখে ঈর্ষান্বিত হতেও পারেন। বর্ষাকালের আগমনী গানের আনন্দ ভেলা।’

সাংবাদিক সুমন গোস্বামী স্ট্যাটাস দিয়েছেন এভাবে ‘গ্রামের নাম বন্দর নগরী চট্টগ্রাম।’

ভ্যানে চড়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টায়।  প্রথম আলো
ভ্যানে চড়ে স্কুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর ১২টায়। প্রথম আলো

জাহিদ হোসেন নামে এক উন্নয়নকর্মী ফেসবুকে লিখেছেন, বর্ষা আসলেই প্রিয় চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে এত ট্রল হয়, তারপরও মেয়র কিংবা সিডিএ চেয়ারম্যানসহ প্রশাসন এত নির্লিপ্ত থাকে কীভাবে? আবৃত্তিকার মিলি চৌধুরী পানিতে ডুবে যাওয়া জামাল খান বাই লেনের অনেকগুলো ছবি পোস্ট করেছেন। ওপরে লিখে দিয়েছেন বন্যায় ডুবে যাচ্ছে জামাল খান বাই লেন, আর কত দিন। 

কবি ফারহানা আনন্দময়ী লিখেছেন, ‘আমি যে এলাকায় আছি, চট্টগ্রামের ভাষায় একে বলে “বাউন্তি”। জল জমার সুযোগ নেই, গড়িয়ে নিচে যায়। জল জমে থাকা এলাকার বাসিন্দাদের কথা ভেবে শঙ্কিত হচ্ছি। চলাচলকারীদেরও দুরবস্থা। সবকিছু স্থবির। এভাবেই আরও দু–তিন দিন একটানা ঝরবে। এর নাম “পচা বৃষ্টি”।’

পানির মধ্যেই চলছে গাড়ি। বেলা ১১টায়।  জুয়েল শীল
পানির মধ্যেই চলছে গাড়ি। বেলা ১১টায়। জুয়েল শীল

সীমা কুণ্ডু নামে একজন লিখেছেন, ‘চারদিক থই থই! আমি নীরব! শব্দ করলেই তো বলবেন আমিই জলের জন্য হেদিয়ে মরেছি! ঠিক আছে, কিন্তু জলাবদ্ধতার জন্য তো মরিনি।’

পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল পাল জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আমবাগান কেন্দ্রে ২৫৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার এবং পতেঙ্গা কেন্দ্রে ১৮৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।