হজ চিকিৎসক দলের সহায়ক গাড়িচালক, মালি, পুলিশ

প্রথম আলো ফাইল ছবি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি।

গাড়িচালক, মালি, জনসংযোগ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ১১৮ জন সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারী সৌদি আরবে যাচ্ছেন হজ চিকিৎসক দলকে সহায়তা দিতে। কিন্তু কয়েকজন ছাড়া এই চিকিৎসক–সহায়ক দলের বাকিদের কারও এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা নেই। সাধারণত নার্স ও চিকিৎসকদের সহায়তার পাশাপাশি রোগীদের এ ধরনের স্বাস্থ্য সহায়তাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়রা। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য যাঁদের সৌদি আরবে পাঠাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে ওয়ার্ড বয় আছেন মাত্র ২ জন। তাঁরা হলেন কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের মো. জসিম উদ্দীন ও জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের মো. মিজানুর রহমান।

ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ১১৮ জনের এই দলকে সৌদি আরবে যাওয়ার বিষয়ে সরকার সম্মতি দিয়েছে। চারটি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা সৌদি আরবে যাবেন। প্রথম দুটি দল ৯ জুলাই ঢাকা ছাড়বে। তারা ২০ আগস্ট পর্যন্ত থাকবে। তৃতীয় দলটি ১৭ জুলাই থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এবং চতুর্থ দলটি ৪ আগস্ট থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সৌদি আরবে কাজ করবে। এই সহায়তাকারী দলের বাইরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও নার্সদের সমন্বয়ে আলাদা দলও আছে।

প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী, হজ চিকিৎসক দলের সহায়তাকারী সদস্যদের কাজ হলো, মেডিকেল ক্লিনিকে রোগীদের সৃষ্ট ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করা, রোগীদের চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ গ্রহণে সহযোগিতা করা এবং ক্লিনিক পরিচ্ছন্ন রাখা। এ ছাড়া দলনেতার নির্দেশক্রমে তাঁরা অন্যান্য দায়িত্ব পালন করবেন। যেসব রোগী শয্যায় চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহায়তাকারীরা বাংলাদেশের হাসপাতালে যেভাবে দায়িত্ব পালন করেন, ঠিক সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।

কিন্তু হজ সহায়ক দলের ১১৮ জনের মধ্যে ৫৫ জনই ধর্ম মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে আছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দীন, সহকারী পরিচালক মোছাদ্দিকুল ইসলাম ও ইয়াছিন মিয়া। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাঠপর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও আছেন।

>হাজিদের চিকিৎসা–সহায়তা দিতে সৌদি যাচ্ছেন ১১৮ কর্মকর্তা–কর্মচারী
কয়েকজন ছাড়া দলের কারও এ কাজে অভিজ্ঞতা নেই


ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইন ও সম্পত্তি বিভাগের সহকারী পরিচালক মোছাদ্দিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এই দলে যাচ্ছেন, তাঁদের সবাই পরিচ্ছন্নতা বা চিকিৎসা সহায়তার কাজ করবেন না। অনেকে থাকবেন দলনেতা।

তালিকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আছেন ১৯ জন; বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গাড়িচালক ১৫ জন, শিক্ষক একজন, পুলিশের সদস্য ১১ জন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর আছেন ৩৪ জন। বিভিন্ন হাসপাতালের চারজন অফিস সহায়ক ও একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হাতেম আলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাগুন আরা ও মাহে আলম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফয়েজ আহমদ, জাহিদুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা শফিক উল্যাহ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবদুর রশীদ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, জননিরাপত্তা বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা নজমুল হক প্রমুখ। তাঁদের একজন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হাতেম আলী বলেন, শুধু চিকিৎসা–সহায়তা নয়, তাঁরা হাজিদের যেকোনো কাজে সহায়তা করবেন।

দলে পুলিশের এএসআই পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন ছয়জন। আছেন নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভার সচিব মো. তাজুল ইসলাম ও ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমান বলেন, যে ধরনের লোকবল দরকার, সে ধরনের লোকই নেওয়া হচ্ছে। শুধু চিকিৎসক দলের সহায়ক নয়, তাঁরা প্রশাসনিক দলের সহায়ক হিসেবেও কাজ করবেন।

সচিব এই দাবি করলেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নথিতে এই দলকে সৌদি আরবে হজ চিকিৎসক দলকে সহায়তার জন্য হজ–সহায়ক দল হিসেবে বলা হয়েছে। এর বাইরে ৫৭ জনের সমন্বয়ে তিনটি আলাদা প্রশাসনিক দল গঠন করা হয়েছে। ওই সব দলের বেশির ভাগ সদস্য সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পর্যায়ের।