বৃষ্টি ভয় ধরিয়ে দিয়েছে রাঙামাটির মানুষদের

রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন উপকেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন খাবারের জন্য। মঙ্গলবার দুপুরে। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন উপকেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রের দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন খাবারের জন্য। মঙ্গলবার দুপুরে। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

‘বৃষ্টির মধ্যে বাড়িঘর ছেড়েও যেতে পারছি না, আবার থাকলেও ভয় হচ্ছে। একটা উভয়সংকটে পড়েছি।’

কথাগুলো বললেন রাঙামাটি শহরের নতুনপাড়ার মো. লিটন। তাঁর মতো অনেককেই টানা বৃষ্টি ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকা মানুষ। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ১২০ পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শহরের শিমুলতলীর বাসিন্দা পিংকি চাকমা বলছিলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমরা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। তারপর কয়েকজন বাড়িঘর পাহারা দিয়ে অন্য সদস্যরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।’

গতকাল দুপুরে কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে প্রবল বর্ষণের পর পাহাড়ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয় আরও দুই শতাধিক মানুষ। গত বছরের ১২ জুন রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১ জনের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি শহরের পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকায় নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর, শিমুলতলী এলাকা থেকে ১২০ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষ পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া কয়েক শ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি তেলসহ শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা পরিবারদের নিজেদের বাড়িঘরে গিয়ে রান্না করে এনে খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

রাঙামাটি আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই ১০৮ এবং ৮ জুলাই ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ মঙ্গলবারও সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পৌরসভার ১৭ হাজার ৭৬৭টি হোল্ডিং (ঘর) রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ের অধীনে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে শুধু ২ হাজার ১৫টি হোল্ডিংয়ের অনুমোদন রয়েছে। বাকি ১৫ হাজার ৭৫২টি হোল্ডিংই অবৈধ। এর মধ্যে নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর, শিমুলতলীসহ বেশ কিছু টিলায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছেন। ২০১৭ সালে ওই সব স্থানে বেশি পাহাড়ধসে হতাহত হয়েছেন।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গত সোমবার দুপুরে কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে দুটি পরিবারের বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় তাহমিনা আক্তার ও সূর্য মল্লিক নামের দুজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হন পাঁচজন।

রাঙামাটি পৌর কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, ‘অধিকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ বসতি আমার এলাকায়। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে অতিঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু কিছু পরিবার গেলেও অধিকাংশ মানুষ যেতে চাচ্ছে না।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ধসের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অতিঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে আবস্থান করছেন, তাঁদের চাল, ডাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, জেলা প্রশাসক স্যার ও জেলা প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় গিয়ে তত্ত্বাবধান করছেন। পাঁচ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিকের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।