নেতৃত্ব দেন শেখ রাসেল, কেরোসিন দেন মাহমুদুল

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন মো. শেখ রাসেল শাহেন শাহ নামের এক শিক্ষার্থী। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জড়ো করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের এই শিক্ষার্থী। আর প্রবীণ এই অধ্যাপকের গায়ে কেরোসিন দেন স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র মো. মাহমুদুল হাসান।

প্রবীণ অধ্যাপক লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টারের মোহাম্মদ আলী হোসাইন ও মো. মইনুল আলম নামের আরও দুই শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে।

এই চার শিক্ষার্থীর মধ্যে মাহমুদুল হাসানকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং বাকি তিনজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের ১৫ জুলাই বেলা ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে কেন তাঁদের বহিষ্কার করা হবে না, মর্মে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ওই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন দেওয়া, লাঞ্ছিত করার বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই তাঁদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করার পর তিন বছর আগে ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। এক বছর আগে তিনি উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়ে বিভাগের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছু উদ্যোগ নেন। এর অংশ হিসেবে কিছু শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারান। এ ছাড়া দক্ষতার প্রশ্ন ওঠায় চাকরিচ্যুত হন কয়েকজন শিক্ষক। এসবের পেছনে মাসুদ মাহমুদের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন তাঁরা। গত এপ্রিলে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামেন কিছু শিক্ষার্থী।

এই শিক্ষার্থীরাই ২ জুলাই প্রবীণ এই অধ্যাপককে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে লাঞ্ছিত করেন। তবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় মাত্র চারজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২১ জন ছাত্রছাত্রী জড়িত। ঘটনার পরে বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিলাম বলে ওই দিন সবার নাম পুলিশকে বলতে পারিনি। কিন্তু পরে ১২ শিক্ষার্থীর নাম স্পষ্টভাবে পুলিশকে বলেছি। এরপরও চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি আমাকে হতাশ করেছে।’