বরিশাল নগরে 'ছেলেধরা' গুজব, আতঙ্ক

বরিশাল নগর ও আশপাশের এলাকায় তিন-চার দিন ধরে ছেলেধরা ও শিশুদের গলা কেটে নেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ও অভিভাবকদের অনেকে আতঙ্কে রয়েছেন।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো ঘটনার প্রমাণ পাননি তাঁরা। বিষয়টি কেবলই গুজব। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের গির্জা মহল্লা এলাকায় আকলিমা বেগম নামের এক নারীকে ছেলেধরা সন্দেহে আটক করে স্থানীয় লোকজন। ওই নারী তাঁর বোনের বাচ্চাকে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন। বাচ্চাটি কান্নাকাটি করলে লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন তাঁকে আটক করে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয় ওই নারী ছেলেধরা নন। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। ওই ঘটনার ভিডিও চিত্র এমডি খান ইমন নামের একজন ইউটিউবে আপলোড করেন। ভিডিওটি ফেসবুকে অনেকে শেয়ার করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ভিডিওটি ৪৪ হাজারবার দেখা হয়েছে।

ওই ঘটনার পর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, একটি চক্র শিশুদের ধরে নিয়ে মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে অনেক অভিভাবক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

নগরের গোরাচাঁদ দাশ লেনের বাসিন্দা ফাতেমা রহমানের তিন মেয়ে প্রাথমিক ও নার্সারিতে পড়ে। তিনি বলেন, চার-পাঁচ দিন ধরে এমন গুজব শুনে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় হচ্ছে।

বিষয়টি নিয়ে নগরের নগরের রূপাতলী, কাউনিয়া, গির্জা মহল্লা, কেডিসি, চৌমাথাসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা কেউই চোখে দেখেননি, লোকমুখে শুনছেন। রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে এমন গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত আমরা। তবে এমন ঘটনার কোনো তথ্য-প্রমাণ কারও কাছে পাইনি। কীভাবে, কী উদ্দেশ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত।’

পুলিশ বলছে, কোনো কুচক্রী মহল এসব গুজব ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যস্ত রেখে অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত করার পাঁয়তারা করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া গলা কেটে নিয়ে যাওয়া কিংবা ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক ছড়িয়ে অভিভাবকদের সন্তানদের সঙ্গে বিদ্যালয় কিংবা কোচিংয়ে পাঠিয়ে বাসাবাড়িতে চুরি বা ডাকাতি করার অভিসন্ধি থাকতে পারে।

বরিশাল নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞা বলেন, ‘এই গুজব সবাই শুনেছেন। কিন্তু কেউ চোখে দেখেননি। বরিশাল নগরে এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমরা অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আশ্বস্ত করছি এবং এ ধরনের গুজব যাতে কেউ বিশ্বাস না করেন, সে জন্য সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি।’ নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও অস্বাভাবিক কোনো আচরণ দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে অবহিত করুন।’

বরিশালের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে কোনো এলাকায় সন্দেহজনক নতুন লোক দেখলে পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। এসব গুজবের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’