সিরাজগঞ্জে জনপ্রতি ১০৩ টাকায় ১৭৯ কনস্টেবল নিয়োগ

পুলিশ
পুলিশ

সিরাজগঞ্জ জেলায় জনপ্রতি মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন ১৭৯ জন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইনস মাঠে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগের ফলাফল ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী (বিপিএম)।

সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার সিরাজগঞ্জ জেলায় পুলিশের কনস্টেবল পদে মোট ৩ হাজার ৩২০ জন প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এর মধ্য থেকে ১ হাজার ৫০৫ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩০৮ জনকে মৌখিক পরীক্ষায় ডাকা হয়। ৩৯ জন নারী, ১৩৬ জন পুরুষসহ মোট ১৭৯ জনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে।

চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে দিনমজুর, ভূমিহীন, রিকশাচালক, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, তাঁতশ্রমিকের সন্তানসহ বেশ কিছু এতিমও রয়েছেন। ৩ জুলাই প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা, ৪ জুলাই লিখিত পরীক্ষা ও ৮ জুলাই মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল ফলাফল প্রকাশের পর নির্বাচিত প্রার্থীরা কনস্টেবল নিয়োগে এমন স্বচ্ছতার প্রশংসা করেন।

গতকাল বিকেলে কথা হয় নবনির্বাচিত কয়েকজন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়ে জেলার কামারখন্দ উপজেলার ঠাকুরঝিপাড়া গ্রামের তাঁতশ্রমিকের সন্তান মোছা. শাহিদা খাতুন বলেন, ‘আমি শুনেছি পুলিশের চাকরি নিতে অনেক টাকা লাগে। পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় আমার বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীরা আমাকে অনেক তাচ্ছিল্য করে অনেক কথা বলেছেন। আজ আমি মাত্র ১০৩ টাকায় পুলিশের চাকরিতে সুযোগ পেয়ে তাঁদের সমুচিত জবাব দিতে পেরেছি।’

উল্লাপাড়া উপজেলার উত্তর মোহনপুর গ্রামের মুরগি বিক্রেতা হজরত আলী সরকারের মেয়ে মোছা. তাছলিমা খাতুন বলেন, ‘আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও নানাজনের নানা কথায় চাকরি পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। আজ আমি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতে পেরেছি।’ এমনভাবে দেশের সব ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতার মূল্যায়ন হবে এই আশাবাদ জানান তাছলিমা।

সদর উপজেলার বহুলী গ্রামের মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে রিকশাচালক মো. হাসান আলী বলেন, ‘আমার অনেক আশা যে একখান সরকারি চাকরি করমু, কিন্তু সরকারি চাকরি পাইতে তো মেলা টাকা নাগে। হঠাৎ হুনি যে শহরের মদ্দে মাইকিং করতেছে, মাত্র ১০৩ টাকায় আবেদন করলে কোনো প্রকার টাকা ছাড়াই যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশে লোক নেওয়া হইব। অনেক আশা কইরা আবেদন খান করছিলাম, পরীক্ষায় অংশ নিছিলাম। আইজ হুনি যে আমি টিকা গেছি। আমার নিজেরই বিশ্বাস অইতেছে না।’

সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী বলেন, ‘সার্কুলার হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। শুধু মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেককে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকে দালাল ও প্রতারক চক্র যাতে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সে জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল। কোনো প্রার্থীর চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত ১০৩ টাকার বেশি এক পয়সাও খরচ হয়নি। আমরা ১০৩ টাকায় চাকরি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলাম। আজ আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আশা করি, যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তারা প্রত্যেকেই শতভাগ সততার সঙ্গে তাঁদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন।’

ফলাফল ঘোষণা শেষে নির্বাচিত ব্যক্তিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী।