পাহাড়ধসের আতঙ্কে রাঙামাটির মানুষ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আতঙ্কে রয়েছে রাঙামাটির মানুষ। নিরাপদ স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলো। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে শহরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার ১২০ পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।

এই বৃষ্টিতে গত সোমবার দুপুরে কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে দুজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। এ ছাড়া রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পাহাড়ধস হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ১৩ জুন রাঙামাটিতে প্রবল বর্ষণের পর পাহাড়ধসের ঘটনায় পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয় আরও দুই শতাধিক মানুষ। গত বছর ১২ জুন রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনায় মৃত্যু হয় ১১ জনের।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি শহরের পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে থাকায় নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রূপনগর, শিমুলতলী এলাকা থেকে ১২০ পরিবাররে পাঁচ শতাধিক মানুষ পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া কয়েক শ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা পরিবারগুলোকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল ও এক কেজি তেলসহ শুকনো খাবার দেওয়া হয়।

রাঙামাটি আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ জুলাই ১০৮ ও ৮ জুলাই ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। গতকাল মঙ্গলবারও সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে।

পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভার ১৭ হাজার ৭৬৭টি হোল্ডিং (ঘর) রয়েছে। একটি হোল্ডিংয়ের অধীনে কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে ২ হাজার ১৫ টির, বাকি ১৫ হাজার ৭৫২টি অবৈধ। এর মধ্যে নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া, রুপনগর, শিমুলতলীসহ বেশ কিছু টিলায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। ২০১৭ সালে ওই সব স্থানে পাহাড়ধসে হতাহত হয়েছে বেশি।

>রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা
বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে ১২০ পরিবার
গতকালও থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, রাঙামাটি শহরের নতুনপাড়া, শিমুলতলী, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম ও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে বেশ কিছু স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গত সোমবার দুপুরে কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে দুটি পরিবারের ঘর বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় তাহমিনা আক্তার ও সূর্য মল্লিক নামে দুজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া আহত হন পাঁচজন।

শহরের নতুনপাড়ার মো. লিটন, শিমুলতলীর পিংকি চাকমা ও রূপনগরের মো. আবদুল আলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বাড়িঘর ছেড়েও যেতে পারছি না, আবার থাকলেও ভয়ে থাকতে হচ্ছে। তারপরও কয়েকজন বাড়িঘর পাহারা দিয়ে অন্য সদস্যরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে।’

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়ধসের আশঙ্কায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে আবস্থান করছে তাদের চাল, ডাল ও শুকনা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পাঁচ আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।