সিলেট বিএনপির ১৪ নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, স্বপদে বহাল

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করেছিল সিলেট বিএনপি। জেলায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দল থেকে বহিষ্কার হওয়া নেতার সংখ্যা ছিল ৩২। তাঁদের মধ্যে ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে আবার তাঁদের স্বপদে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সিলেটে বিএনপির তৃণমূল অনেকটা ‘শক্তিহীন’ হয়ে পড়ায় কেন্দ্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। সিলেটে ৩২ জনের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাঁদের স্বপদে বহাল রাখার নির্দেশ স্থানীয় নেতাদের কাছে পৌঁছেছে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশে সিলেটে ৩২ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কেন্দ্রে আবেদন করার পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ১৪ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে সপদে ফিরে দেওয়া হয়েছে।

সিলেটের ১২ উপজেলায় গত ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। জাতীয় নির্বাচনের কারণে বিএনপি স্থানীয় এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এ অবস্থায় সিলেট জেলার ১২ উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত থাকেন। আবার দুটি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে থাকা বিএনপি নেতাসহ ১২ জন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছিলেন। ১২ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা দলের সাতজন নেত্রীসহ ২০ জন প্রার্থী হয়েছিলেন।

এই ৩২ জনের মধ্যে সদর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দল থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন। তাঁকেসহ বিশ্বনাথের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার সহসভাপতির দায়িত্বে থাকা সোহেল আহমদ চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সদস্য মিছবাহ উদ্দিন, বালাগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলার উপদেষ্টা আবদাল মিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলার সদস্য গোলাম রব্বানী, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সহসভাপতি জিল্লুর রহমান, গোলাপগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া জেলার সহসভাপতি রশীদ আহমদ, গোয়াইনঘাটে প্রার্থী হওয়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি লুৎফুল হক, উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার সহসভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান সুফী, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উপদেষ্টা মনির আলী ও উপজেলা সদস্য হারুন আহমদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত বাকি ২০ জনের সবাই ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এর মধ্যে নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া বিএনপি ও মহিলা দলের সাতজন। তাঁরা হচ্ছেন জকিগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সভাপতি ইয়াহইয়া বেগম, জেলা মহিলা দলের সাবেক সহসভাপতি খোদেজা বেগম, জেলা মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজমা বেগম, বিশ্বনাথ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ইয়াসমিন, জেলা মহিলা দলের সহসভাপতি স্বপ্না শাহীন, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক ও জেলা মহিলা দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী ইকবাল, বালাগঞ্জ উপজেলা মহিলা দলের সহসভাপতি সেবু আক্তার।

বিএনপি সূত্র বলছে, বহিষ্কৃত ৩২ জনের কেউই বিজয়ী হতে পারেননি। সরকারনিয়ন্ত্রিত নির্বাচন ও ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ না নেওয়ার কারণ দেখিয়ে বহিষ্কৃতরা আবার দলে ফেরার জন্য কেন্দ্রে আবেদন করেন।

গতকাল সন্ধ্যায় জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ফখরল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আবেদনের পর ১৪ জন নেতা ও নেত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সিলেট জেলা বিএনপির কাছে চিঠি দিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া ১৪ নেতার নাম জানান। তাঁরা হলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাজহারুল ইসলাম, উপদেষ্টা রশিদ আহমদ, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, জেলা বিএনপির সহসভাপতি লুৎফুর রহমান, গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপির সদস্য মিসবাহ উদ্দিন, জেলা বিএনপির সদস্য আহমদ নূর উদ্দিন, মহানগর ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক আশরাফ উদ্দিন, জেলা মহিলা দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাজমা বেগম, বিশ্বনাথ উপজেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক নুরুন্নাহার ইয়াসমিন, জেলা মহিলা দলের সদস্য বেগম স্বপ্না শাহীন, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি গোলাম রব্বানী, জেলা বিএনপির জিল্লুর রহমান ও জেলা মহিলা দলের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ফেরদৌসী ইকবাল।