অবশেষে বাতিল মিরপুরের সেই ২৬ সেতুর দরপত্র

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ২৬টি সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল শুরু থেকে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও হয়। কিন্তু বন্ধ হচ্ছিল না দরপত্র প্রক্রিয়া। সর্বশেষ কাজও বণ্টন করা হয় লটারি ছাড়াই। এ নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ প্রকাশের পর অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। গত সোমবার কমিটি মিরপুরে সরেজমিনে তদন্ত করে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর রাতেই ওই ২৬ সেতুর দরপত্র প্রক্রিয়া বাতিলের ঘোষণা দেয়। একই সঙ্গে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল কাইয়ুমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম খালিদ মাহমুদ গতকাল মঙ্গলবার সকালে কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকায় সেতু নিয়ে অনিয়মের সংবাদ দেখে সোমবার সকালেই মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জরুরিভাবে মিরপুরে পাঠানো হয়। সোমবার রাতেই সেখানে গিয়ে কাগজপত্রসহ যা যা দেখার সব দেখেছি। তাতে মনে হয়েছে, এখানে কিছু একটা অনিয়ম করেছে, যেটা পত্রিকায় আসা প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে সব কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে কথা বলে  সেতুর দরপত্র বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির অন্য দুজন সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মাহবুব আলম তালুকদার ও গ্রামীণ রাস্তায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত সেতু নির্মাণ প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক আলতাফ হোসেন এ সময় সার্কিট হাউসেই ছিলেন। বুধবার (আজ) তাঁরা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেবেন বলে জানান।

কুষ্টিয়ায় ১০৩টি সেতু তৈরির জন্য ১৯ জুন রাতে চিঠি আসে। এতে ২০ জুনের মধ্যে দরপত্র বিক্রি শেষ করতে বলা হয়। এ নিয়ে ২২ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়, ‘রাতে এল চিঠি, পরদিনই সব দরপত্র বিক্রি শেষ’ শিরোনামে সংবাদ। সেখানে মিরপুরে ২৬টি সেতুর দরপত্রের অনিয়মের বিষয়টি উঠে আসে। ওই দিনই মিরপুরের পিআইও আবদুল কাইয়ুমকে ডেকে তিরস্কার করেন জেলা প্রশাসক। একই কারণে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। কিন্তু তবু বন্ধ হয়নি দরপত্র প্রক্রিয়া। গত রোববার লটারি ছাড়াই মিরপুরে ২৬টি সেতুর কাজ সিন্ডিকেটের ঠিকাদারেরা পেয়ে যান। এ নিয়ে সোমবার প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়, ‘মিরপুরে “হিসাব করে” দরপত্র’ শিরোনামে সংবাদ। ওই সংবাদের পরে সোমবারই মন্ত্রণালয় তদন্ত কমিটি করে সরেজমিনে মিরপুরে পাঠায়।

তদন্ত কমিটির সদস্য মাহবুব আলম তালুকদার প্রথম আলোর প্রতিনিধিকে বলেন, ‘অল ক্রেডিট গোজ টু ইউর নিউজ পেপার (প্রথম আলো)। এর কারণে সারা দেশে একটা ঝাঁকুনি হয়েছে। এখন কাজ হবে। অনিয়মের সংবাদ দেখে মন্ত্রণালয় সাথে সাথেই অ্যাকশন নিয়েছে।’