ইউএসটিসিতে আর শিক্ষকতা করবেন না অধ্যাপক মাসুদ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে (ইউএসটিসি) আর শিক্ষকতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তাঁর বক্তব্য, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কাজ করছে। তাঁরা আমার ওপর হামলাও করছে। এ অবস্থায় সেখানে আর না যাওয়ার কথা ভাবছি আমি।’

ইউএসটিসি সূত্র জানায়, তিন মাস আগে গুটিকয় শিক্ষার্থী ‘মিথ্যা’ অভিযোগ নিয়ে মাঠে নামার পর মাসুদ মাহমুদ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন। কিন্তু বিভাগ থেকে সহকর্মীরা বারবার অনুরোধ এবং কোনো ঝামেলা হবে না এমন আশ্বাস দেওয়ার পর তিনি পুনরায় যাওয়া শুরু করেন। এর মধ্যেই ২ জুলাই কিছু শিক্ষার্থী তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। তাঁদের মধ্যে একজন তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন। এরপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। মাসুদ মাহমুদের আশঙ্কা, এখন আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে একই পরিস্থিতির শিকার হতে পারেন তিনি।

তিন বছর আগে ইউএসটিসির ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। গত বছর তিনি বিভাগের উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভাগের উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে ছিল ৭৫ শতাংশ শ্রেণি উপস্থিতি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি অদক্ষ শিক্ষকদের চাকরিচ্যুত করা। এতেই তাঁর বিপক্ষে চলে যান নিয়মিত ক্লাস না করায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারানো শিক্ষার্থীরা। আর তাঁদের ইন্ধন দেন চাকরিচ্যুত শিক্ষকেরা। এই শিক্ষার্থীরাই গত এপ্রিলে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

চার শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত

মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এক শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে এবং তিন শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শৃঙ্খলা কমিটি।

এই চার শিক্ষার্থী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির মো. মাহমুদুল হাসান, মো. মঈনুল আলম ও মোহাম্মদ আলী হোসাইন এবং স্নাতক শ্রেণির মো. শেখ রাসেল। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেওয়া, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা, গালিগালাজ এবং বই নষ্ট করার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাঁকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য তিনজনের মধ্যে শেখ রাসেল পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন এবং শিক্ষার্থীদের জড়ো করেন। বাকি দুজনের বিরুদ্ধে শারীরিক লাঞ্ছনা, খারাপ আচরণ এবং শিক্ষা উপকরণ ক্ষতি করার প্রমাণ মিলেছে। এই তিনজনকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। ১৫ জুলাই বেলা তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

তবে এই সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছেন অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ২১ জন শিক্ষার্থী জড়িত। মাত্র ৪ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত কেন?’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৪ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক মাসুদ মাহমুদের ইউএসটিসিতে আর না যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘স্যার অনেক বড় কষ্ট পেয়েছেন। স্যার যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটি তো আমাদের মানতে হবে।’