রাজশাহীতে কৃষিজমিতে রাতে পুকুর খনন

ফসলি জমিতে পুকুর খননের এই চিত্র পবার বড়গাছি এলাকার দক্ষিণপাড়ার।  ছবি: প্রথম আলো
ফসলি জমিতে পুকুর খননের এই চিত্র পবার বড়গাছি এলাকার দক্ষিণপাড়ার। ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীতে নির্বিচারে কৃষিজমিতে পুকুর খননের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। পুকুর খনন করে পাওয়া মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। এই মাটি পরিবহনের সময় নষ্ট হচ্ছে এলাকার রাস্তা। এ অবস্থায় পুকুর খনন বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু দিনে অভিযান চালিয়ে যে পুকুর খনন বন্ধ করা হচ্ছে, রাতেই আবার সেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো উপজেলায় ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের সহযোগিতাই পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

রাজশাহীতে উপর্যুপরি পুকুর খননের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত রাজশাহীর পবা, গোদাগাড়ী, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলায় পুকুর খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এরপরও দু–একটি উপজেলায় প্রশাসন পুকুর খননের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও লাভ হচ্ছে না। যে এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে, সেখানে রাতের বেলায় পুকুর খনন করা হচ্ছে। অন্য জায়গায় যেখানে হয়তো প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে না, সেখানে দিনের বেলায় প্রকাশ্যেই চলছে পুকুর খনন। 

নির্বিচারে পুকুর খননের কারণে রাজশাহীর পবা উপজেলায় কৃষিজমি ও রাস্তাঘাট হুমকির মুখে পড়েছে। এ উপজেলা প্রশাসন নিয়মিতই অভিযান চালাচ্ছে। তারপরও উপজেলার বড়গাছি এলাকায় পুকুর খনন চলছে। গ্রামের আনারুল ইসলাম এই পুকুর খনন করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, আনারুল ইসলাম পুকুর খননকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বাইরের পার্টির সঙ্গে মধ্যস্থতা করে এলাকায় পুকুর খনন করাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি বড়গাছি বিলেই ১০০ বিঘা পুকুর খনন করেছেন। আরও ৮ বিঘায় খননকাজ চালাচ্ছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ইউএনওর কাছে অভিযোগ করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত দিনে অভিযান চালিয়ে খননকাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু রাতে আবার ড্রেজার নিয়ে গিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। 

গত রোববার এই গ্রামে গিয়ে রাস্তাঘাটের দুরবস্থা দেখা যায়। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন দেখান, অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে পুকুর খননের কারণে তাঁদের ফসলি জমিতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা সেই সব জমিতে কোনো আবাদ করতে পারছেন না। তিন ফসলি জমিতে এখন তাঁরা কোনো ফসলই করতে পারছেন না। গ্রামের সুজন শেখ বলেন, তাঁর নিজের দুই বিঘা জমিতে পুকুরের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি কোনো আবাদ করতে পারছেন না। 

মাটি ইটভাটায় পরিবহনের কারণে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আশরাফের মোড় রাস্তা বেহাল।  ছবি: প্রথম আলো
মাটি ইটভাটায় পরিবহনের কারণে পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আশরাফের মোড় রাস্তা বেহাল। ছবি: প্রথম আলো

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আনারুল ইসলামকে খুঁজে এলাকায় পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে তাঁর বাবা আশরাফ আলী বলেন, পুকুর কাটা তো শেষ। 

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের আশরাফের মোড় এলাকায় দুই কিলোমিটার পাকা রাস্তা পুকুরের মাটি বিক্রেতাদের কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় কাদা জমে। এ রকম একজন মাটি ব্যবসায়ী রজব আলী বলেন, বৃষ্টি হলেযাতে সমস্যা না হয় সে জন্য তাঁরা রাস্তা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। 

পবা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, আইন অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি–বেসরকারি স্থাপনাসহ অথবা আবাসিক এলাকার সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এই আইন অনুযায়ী এ বছরে পবা উপজেলায় প্রায় ৩০টি অভিযান চালিয়েছেন। ২৫টি ড্রেজার মেশিন ধ্বংস করেছেন। কিন্তু দু–এক দিন পর তাঁরা আবার খনন শুরু করে। দিনে অভিযান চালালে রাতে তাঁরা আবার সেই পুকুর খনন করছেন। নিরাপত্তার কারণে রাতে অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। 

একই অবস্থা চলছে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোতে। সপ্তাহখানেক আগে নেজামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ইউএনও নাসরিন বানু খননযন্ত্রের ব্যাটারি খুলে এনেছিলেন। তিনি চলে আসার পরে সেই পুকুর আবার খনন করা হয়েছে। উপজেলার চান্দুড়িয়া এলাকার বিলের প্রায় সিংহভাগ জমি এখন পুকুর হয়ে গেছে।