গোয়ালন্দে পদ্মায় মিলছে না ইলিশ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের পদ্মার ইলিশ বেশ সুস্বাদু। তবে এ বছর ইলিশের দেখা সহজে মিলছে না। ইলিশ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন জেলেরা। অথচ প্রতি বছর এই সময় অন্যান্য মাছের সঙ্গে ধরা পড়ে প্রচুর ইলিশ। 

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ ধরা শুরু করেন তাঁরা। গোয়ালন্দসহ রাজবাড়ী, পাবনা ও মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরাও এখানে মাছ শিকার করেন। কিন্তু এবার ইলিশ না পাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

জেলেরা বলেন, প্রতি বছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত নদীতে জাটকা সংরক্ষণের সময় হিসেবে মাছ ধরা নিষেধ থাকে। অক্টোবর মাসে প্রায় ১ মাসের মতো মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকে। এ ছাড়া সারা বছর কারেন্ট জালের ব্যবহার এবং জুলাই মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত আইড়, বাগাইড়, পাঙাশ বা বোয়ালসহ শিলং মাছের পোনা ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ থাকে। এ সময় বেকার জেলেদের জন্য তেমন একটা বরাদ্দ দেওয়া হয় না। এ বছরই প্রথম কিছু সংখ্যক জেলেদের শুকনা খাবার ও চাল দেওয়া হয়েছিল, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এসব কার্যক্রম শেষে নদীতে মাছ না পাওয়ায় জেলেদের সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

ইলিশ না পাওয়ার কারণ সম্পর্কে জেলেরা বলেন, এবার বেশ কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদীতে জোয়ার হচ্ছে। সঙ্গে দেখা দিয়েছে ঢেউ। যে কারণে মাছের দেখা মিলছে না। অথচ জেলেদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, অভয়াশ্রম করা বা খাঁচায় মাছ চাষের ব্যবস্থা নাই।

পাবনার বেড়া থানার ঢালার চর থেকে প্রায় ১৫ দিন আগে গোয়ালন্দের পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে এসেছেন হারানাথ হালদার, শফিকুল ইসলাম, পরান হালদার, শিপলুসহ প্রায় ২০-২২ জন জেলে। পরান হালদার গত সোমবার বিকেলে দেবগ্রামের কাওয়ালজানিতে কয়েকজন নদীর পাড়ে বসে জালের ছোটখাটো মেরামত কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, এই জাল ও নৌকা নিয়ে নদীতে নামতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে; যার অর্ধেকের বেশি মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া। এই ১৫ দিনে একদিন মাত্র তিনি ৬ কেজি ওজনের একটি বাগাইড় মাছ পান। ওই মাছটি ৭০০ টাকা কেজি দরে ৪,২০০ টাকায় দৌলতদিয়ার আড়তদারের কাছে বিক্রি করেন। অথচ এক সপ্তাহে প্রায় ১১ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। খরচের টাকাই ওঠেনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, ‘তুলনামূলক বৃষ্টি কম হওয়ায় নদীতে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। বৃষ্টি বেশি হলে নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ইলিশের দেখা মিলবে। আশা করি আগামী মাসে নদীতে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাগর থেকে এ সময় ইলিশ ঝাঁকে ঝাঁকে নদীর দিকে আসে। এ সময় তাই নদীতে ইলিশ পাওয়ার কথা। তবে বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আছে। এই সুযোগে অনুপ্রবেশকারী জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গিয়ে ইলিশসহ প্রচুর পরিমাণে অন্যান্য মাছ শিকার করে যান। তাই নদীর পাশাপাশি দেশের সমুদ্রসীমায় নজরদারি বাড়ালে নদীতেও ইলিশ পাওয়া যেত।

মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীতে মিঠা পানির প্রবাহ বৃদ্ধি, তাপমাত্রাসহ পানির ভৌত গুণাগুণসহ বেশ কিছু বিষয়ের ওপর ইলিশের প্রাচুর্য নির্ভর করে। এখন ইলিশের প্রাচুর্য হয়তো কম। দেখা যাবে যেকোনো সময় ইলিশ মিলতে পারে জেলেদের জালে।