মোয়াজ্জেমের অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ফাইল ছবি
সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ফাইল ছবি

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি পিছিয়েছে। এ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন তারিখ ১৭ জুলাই নির্ধারণ করেছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।

সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অভিযোগ গঠনের শুনানির নতুন দিন ঠিক করেছেন আদালত।

আদালত পুলিশ সূত্র বলছে, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম আছেন কাশিমপুর কারাগারে। আজ ওই কারাগার থেকে কোনো আসামিকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হয়নি। এর আগে গত ৩০ জুন মোয়াজ্জেমকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। সেদিন অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়। তবে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগ গঠনের শুনানির তারিখ আজ বুধবার ঠিক করা হয়। মোয়াজ্জেমের আইনজীবী ফারুক হোসেন সেদিন আদালতকে বলেছিলেন, মামলার বিচার্য বিষয় যে ভিডিও বাদী পেনড্রাইভে করে আদালতে জমা দিয়েছেন, তার অনুলিপি চেয়ে আমরা আবেদন করেছি। সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী, আসামিপক্ষ ওই ভিডিওর অনুলিপি পাওয়ার দাবি রাখেন। তখন সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম আদালতকে বলেন, বাদী পেনড্রাইভে করে যে ভিডিও আদালতে জমা দিয়েছেন, তা সবাই দেখেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো ওই ভিডিও আছে। আইন অনুযায়ী, ওই ভিডিও মামলার আলামত। আলামতের অনুলিপি আসামিপক্ষ পেতে পারেন না। সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে সেদিন জানান, সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমকে বাদীর জমা দেওয়া ভিডিওর অনুলিপি দেওয়ার অনুমতি দেন আদালত।

ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গত ১৬ জুন উচ্চ আদালত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। পরদিন তাঁকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। মোয়াজ্জেমের পক্ষে জামিন আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেদিন মামলার বাদী সৈয়দ সাইয়েদুল হক আদালতকে বলেছিলেন, আইনের সেবক হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাননি সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম। তবে মোয়াজ্জেমকে নির্দোষ দাবি করেন তাঁর আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ।

নুসরাত জাহানকে গত ৬ এপ্রিল পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন তাঁর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। এর ১০ দিন আগে নুসরাত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সে সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে ছড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ আনা হয়। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।

৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে পৌঁছায়। তবে পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামান বারবার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। একপর্যায়ে ৩ জুন রাতে পরোয়ানা হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেন তিনি। এর দুই দিন পর বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পরোয়ানা রংপুর রেঞ্জে পাঠানো হয়। তখন আবার রংপুর রেঞ্জ বলেছে, কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি।

পুলিশের এই গড়িমসির সুযোগে মোয়াজ্জেম হোসেন সটকে পড়েন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।