শেরপুরে রেলপথ স্থাপন দাবি

শেরপুর জেলা সদরকে অন্তর্ভুক্ত করে রেলপথ স্থাপনের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুরে শহরের চকবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে।  ছবি: প্রথম আলো
শেরপুর জেলা সদরকে অন্তর্ভুক্ত করে রেলপথ স্থাপনের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে স্বাক্ষর করছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। গতকাল দুপুরে শহরের চকবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ছবি: প্রথম আলো

শেরপুরে জেলা সদরকে অন্তর্ভুক্ত করে রেলপথ স্থাপনের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে শহরের চকবাজার এলাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া।

বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রায় ১০ হাজার মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত একটি স্মারকলিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক এ টি এম জিয়াউল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইইডি) সহযোগিতায় নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ, শেরপুর জেলা কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

রেলপথ স্থাপনের দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দলমত-নির্বিশেষে সর্বস্তরের বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচি চলাকালে অবিলম্বে শেরপুরে রেলপথ স্থাপনের দাবিতে সহমত প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি জয়শ্রী দাস, সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন্নাহার, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, জেলা শাখার সভাপতি রাজিয়া সামাদ, শেরপুর শিল্প ও বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রকাশ দত্ত, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিনহাজ উদ্দিন, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামীম হোসেন, শেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শিবশঙ্কর কারুয়া, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বায়েজিদ হাসান, শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শরিফুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিডি ক্লিনের আহ্বায়ক আল আমিন, রক্ত দিন জীবন বাঁচান–এর আহ্বায়ক সোয়েল রানা প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত ৬১তম জেলা হচ্ছে শেরপুর। খাদ্যে উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলায় রেলপথ স্থাপন করার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩০-৪০–এর দশকে প্রথম পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭০–এর দশকের শেষের দিকে পুনরায় জামালপুর-রাংটিয়া ভায়া শেরপুর রেলপথ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। কিন্তু সেটিও আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালের ৮ জুন তৎকালীন রেলমন্ত্রী পিয়ারপুর থেকে শেরপুরে রেলপথ স্থাপনের ঘোষণা দেন। এ জন্য প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ শুরু হলেও আজ পর্যন্ত এর অগ্রগতি খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি।

এতে আরও বলা হয়েছে, গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত খাদ্যে উদ্বৃত্ত শেরপুর জেলায় রয়েছে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা। জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দর আন্তদেশীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল করেছে। এ জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সড়কপথ। কিন্তু সার্বিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে না ওঠায় শেরপুরের উন্নয়ন ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সম্ভাবনাময় শেরপুর জেলার পর্যটনশিল্পের বিকাশ, নাকুগাঁও স্থলবন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা সহজতর করার লক্ষ্যে রেল পরিবহন চালু এখন সময়ের দাবি।

স্মারকলিপি গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক জিয়াউল ইসলাম বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়নে (এসডিজি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য শেরপুর জেলায় রেলপথ স্থাপন অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সুবিবেচনা করবেন বলে তিনি আশা করেন। তিনি অনতিবিলম্বে স্মারকলিপিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর আশ্বাস দেন।