এক পাশে ধস, ঝুঁকিতে চলাচল

রাঙামাটি–চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় ধসে পড়েছে এক পাশ। খুঁটি গেড়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায়।  সুপ্রিয় চাকমা
রাঙামাটি–চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার কলাবাগান এলাকায় ধসে পড়েছে এক পাশ। খুঁটি গেড়ে ধস ঠেকানোর চেষ্টা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায়। সুপ্রিয় চাকমা

টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কলাবাগান এলাকায় সড়কের এক পাশ ধসে ছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে গাড়ি চলাচল। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শনিবার থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে রাঙামাটিতে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের কাউখালী উপজেলা ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় কয়েক দফা পাহাড়ধস হয়। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথমে ওই এলাকায় পাহাড়ধস হয়। এরপর গতকাল বুধবারও কয়েক দফা পাহাড়ধস হলে সড়কের একাংশ ঘাগড়াছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে সড়কের পাশে থাকা দুটি বিদ্যুতের খুঁটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ধস ঠেকানো না গেলে যেকোনো সময় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। 

২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে শালবন যৌথ খামার এলাকায় ১০০ ফুট সড়ক বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া অন্তত ১০ থেকে ১৫টি স্থানে বড় আকারে পাহাড়ধস হয়। এ কারণে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পাহাড়ধসের ঘটনার ৯ দিন পর যৌথ খামার এলাকা অস্থায়ী পাটাতনের সেতু নির্মাণের পর যান চলাচল চালু করা হয়। একই সঙ্গে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, আসামবস্তি-কাপ্তাই ও ঘাগড়া বড়ইছড়ি সড়কেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, রাঙামাটি শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে কলাবাগান এলাকা। সেখানে সড়কের পাশের ৪০ থেকে ৫০ ফুটের মতো অংশ ধসে পড়েছে পাশের ছড়ায়। কলাবাগান এলাকার এক কিলোমিটার আগেও পাহাড়ধস হয়েছে। এ ছাড়া সড়কের মানিকছড়ি ও যৌথ খামার এলাকায় কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। 

এদিকে, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি ও আসামবস্তী-কাপ্তাই সড়কেরও বেশ কয়েক স্থানে পাহাড়ধস হয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ধসে পড়া মাটি সরিয়ে নেওয়ায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কলাবাগান এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে গাড়ি। পাকা সড়কের পাড় ইতিমধ্যে ছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। আর সামান্য ভাঙলেই সড়ক বিলীন হয়ে যাবে। সড়ক থেকে পাশে ঘাগড়া ছড়া অন্তত ৫০ ফুট গভীর। সওজের কর্মীরা ধস ঠেকানোর চেষ্টা করছেন। 

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের যাত্রীবাহী বাসচালক মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, ২০১৭ সালে পাহাড়ধসের পর বেশ কিছু স্থান চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ধসে আরও ঝুঁকি বেড়েছে। পাকা সড়ক থেকে মাত্র দেড় থেকে দুই হাতে ভাঙন। একটু অসাবধান হলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। 

কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দফায় পাহাড়ধসে সড়কের একাংশ ৫০ ফুট নিচে ঘাগড়া ছড়ায় বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত ধস ঠেকানোর ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় পাহাড়ধসে সড়কটি বিলীন হয়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। আমার বাড়িটিও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। কোথাও যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে থাকতে হচ্ছে।’ 

পাহাড়ধস ঠেকানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুধু অস্থায়ীভাবে পাহাড়ধস ও ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। যেকোনো মুহূর্তে আবার পাহাড়ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

রাঙামাটি সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ইউনুছ বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস হয়েছে। এর মধ্যে রাঙামাটি শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরত্বের কলাবাগানে মাঝারি ধরনের ধস হয়েছে। আমরা অস্থায়ীভাবে ধস ঠেকানোর করাজ করছি।’