৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলা, ১১ জনের বিদেশ যেতে মানা

মুঠোফোন কোম্পানি সি

সিটিসেল, দুদক
সিটিসেল, দুদক

টিসেলের নামে এবি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় চার শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলার এজাহারভুক্ত ১১ আসামির বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো চিঠিতে ওই নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।

যাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক, পরিচালক ফিরোজ আহমেদ ও সৈয়দ আফজাল হোসেন, সাবেক পরিচালক মো. আব্দুল আউয়াল, মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসেন, শিশির রঞ্জন বোস, ফাহিমুল হক, মো. মেজবাহুল হক, জাকিয়া শাহরুদ খান রুনা, মিশাল কবির ও বি বি শাহ রায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের উপপরিচালক মো. সামছুল আলমের সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা সপরিবারে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের বিদেশ যাওয়া বন্ধ করা প্রয়োজন।

এর আগে গত ১০ জুন প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান এবং তাঁর স্ত্রী নাছরিন খানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে চিঠি পাঠায় দুদক। তাঁরা দুজনও এই মামলার আসামি।

প্রসঙ্গত, সিটিসেলের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় চার শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৭ সালের ২৮ জুন ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। রাজধানীর বনানী মডেল থানায় মামলাটি করেন দুদকের উপপরিচালক শেখ আবদুস সালাম। এখন ওই মামলার তদন্ত করছেন আরেক উপপরিচালক সামছুল আলম।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা অসৎ উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে আর্থিক লাভের জন্য প্রতারণা, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিবিটিএল) ব্যাংক গ্যারান্টির আবেদন যাচাই-বাছাই না করেই এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখার দেওয়া প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠান। পরে তিনজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সহায়তায় চারটি বোর্ড সভার মাধ্যমে ৩৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার অপরিবর্তনীয় শর্তবিহীন ব্যাংক গ্যারান্টি অনুমোদন করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ওই ঋণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পিবিটিএল পরিশোধ করেনি। ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংক গ্যারান্টির শর্তানুযায়ী এবি ব্যাংকের মহাখালী শাখা সুদসহ ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৩৬৩ টাকা ১৩ পয়সা পরিশোধের মাধ্যমে পরস্পর যোগসাজশে আত্মসাৎ করেন।

মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, ভাইস চেয়ারম্যান আসগর করিম, পরিচালক নাছরিন খান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহবুব চৌধুরী, এবি ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাইজার আহমেদ চৌধুরী, এম ফজলুর রহমান, শামীম আহম্মেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান চৌধুরী, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট সালমা আক্তার, মহাদেব সরকার সুমন, এসভিপি ও রিলেশনশিপ ম্যানেজার সৈয়দ ফরহাদ আলম, আরশাদ মাহমুদ খান, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শাহানুর পারভীন চৌধুরী, এভিপি জার ই এলাহী খান এবং রিলেশনশিপ অফিসার মো. কামারুজ্জামান।

এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হক ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। এর এক মাস পর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ওয়াহিদুল হকসহ আট জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। অফশোর প্রতিষ্ঠান করে টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয় তাঁদের বিরুদ্ধে। ওই দিনই এম ওয়াহিদুল হক, ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড ট্রেজারি শাখার প্রধান আবু হেনা মোস্তফা কামাল এবং ব্যবসায়ী সাইফুল হককে গ্রেপ্তার করে দুদক।